সাঁড়াশি অভিযান শেষ
* চলবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান
* ৫ দিনে ১৬৬ জঙ্গিসহ ১১
হাজার ৭০৫ জন গ্রেফতার
আজাদ হোসেন সুমন ও সুজন কৈরী : সাঁড়াশি অভিযান শেষ; এখন থেকে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান চলবে। গতকাল জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়ে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ২১ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাঁড়াশি অভিযান নিয়ে দেশব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় পুলিশ এ অভিযানের পরিবর্তে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপিও এ ব্যাপারে অভিযোগ করে আসছিল যে, বিশেষ অভিযানের নামে কার্যত বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশি অভিযানে যাতে কোনো সাধারণ নাগরিক হয়রানির স্বীকার না হয়, সেজন্যে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় এ অভিযান নয়। এটা শুধু তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বিএনপি যদি সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের তাদের নেতাকর্মী মনে করে তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা আমাদের কাজ। এ কাজে স্বার্থান্বেষী মহল বাধা সৃষ্টি করছে। যত বাধা আসুক না কেন আমারা আমাদের দায়িত্বে অবিচল আছি, থাকব। কোনো শক্তি বা অপশক্তি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে।
এদিকে, গতকাল পুলিশ নতুন জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়ে ১৭ জন জেএমবি, ১ জন হিজবুত তাহরীর, ২ জন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) এবং ১ জন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্নস্থানে এ অভিযান চালানো হয়। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৬৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পুলিশ অভিযানের শুরু থেকেই করে আসছে। যেদিন থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে সেদিন থেকে দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ বাহিনীকে পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো সাধারণ মানুষ হয়রানির স্বীকার না হয়। শুধু তাই নয়, সদর দফতর থেকে অভিযানকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়েছে। দেশের কোথাও কাউকে হয়রানি করা হয়েছে এমন অভিযোগ বা তথ্য আমরা পাইনি। একটি রাজনৈতিক দল অভিযোগ করছে এটা আমলযোগ্য নয়। ওটা রাজনীতির ভাষা। কোথায় কোন বিএনপি নেতাকে হয়রানি করা হয়েছে, তারা সেটাও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি।
পুলিশ সদর দফতরের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান জানান, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রথমদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে এক হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সদস্য এবং টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও এই জেলাগুলো থেকে একজন করে জেএমবি সদস্য আটক করা হয়েছে। এছাড়া, বগুড়া জেলা থেকে তিন জেএমবি, বরগুনা থেকে দুই আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) এবং রাজধানী থেকে এক হিজবুত তাহরীর সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, চারটি ককটেল, ৫শ গ্রাম গান পাউডার, পাঁচটি পেট্রল বোমা এবং দশটি উগ্রপন্থি বই উদ্ধার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল পর্যন্ত পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১৬৬ জঙ্গিসহ মোট ১১ হাজার ৭০৫ জনকে গ্রেফতার করে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি