স্বামীকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন সখি
এম কবির : কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল হক ওরফে মিরাজ (৪৬) ২০১৫ সালের ৪ জুন নিখোঁজ হন। ওই সময় কুষ্টিয়ায় বিএনপির আরও ৬ জন নিখোঁজ হন। তাদের এখনও খোঁজ মেলেনি। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হয়।
মিরাজ নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধান পেতে ২০১৫ সালের ২০ জুন এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন মিরাজের স্ত্রী সখি খাতুন। এ ব্যাপারে মিরাজের স্ত্রী সখি খাতুন ২০১৫ সালের ১৯ জুন শুক্রবার দুপুরে কুমারখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও কুষ্টিয়া র্যাব-১২ ক্যাম্পে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই মিরাজের সন্ধান পাচ্ছিলেন না মিরাজের পরিবার। অবশেষে ১ বছর ১১ দিন পর মিলল মিরাজের কঙ্কাল।
২০১৫ সালের ৫ জুন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল হক ওরফে মিরাজ (৪৬) নিখোঁজ হন বলে তাঁর পরিবার থেকে দাবি করা হয়। তিনি কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকার মৃত আবদুল গণির ছেলে। ৪ জন বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে একই উপজেলার জয়নাবাদ এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
এ ব্যাপারে মিরাজের স্ত্রী সখি খাতুন পরের দিন শুক্রবার দুপুরে কুমারখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও কুষ্টিয়া র্যাব-১২ ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন। জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, মিরাজের কোনো শত্রু আছে কি না, তা তাঁদের জানা নেই।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, মিরাজের জয়নাবাদ এলাকায় গড়াই নদের পাশে গড়াই নামে একটি ইটের ভাটা আছে। প্রতিদিনের মত বৃহস্পতিবার ভাটায় যান তিনি। রাত সাড়ে আটটার দিকেও মুঠোফোনে তাঁদের কথা হয়। রাত ১০টার দিকে মিরাজের ব্যক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ পান তারা। পরে মিরাজ বাড়িতেও আসেননি। নিকটাত্মীয়সহ সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিষয়টি শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়া র্যাব-১২ ক্যাম্পেও লিখিতভাবে জানানো হয়।
এরপর ২০১৫ সালের ২০ জুন মেয়ে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মিরাজের স্ত্রী সখি খাতুন।
মিরাজুল হকের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সখি খাতুন। গত বছরের ২০ জুন শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মিরাজুলের ছোট ভাই মেজবাউর রহমান। ৪ জুন রাতে কুমারখালী উপজেলার জয়নাবাদ এলাকার নিজ ইটভাটা থেকে শহরের বাড়িতে ফেরার পথে মিরাজুল নিখোঁজ হন। মিরাজুল উপজেলার চাপড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনায় ৫ জুন মিরাজুলের স্ত্রী কুমারখালী থানায় একটি জিডি ও পরদিন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে অপহরণের মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেজবাউর রহমান বলেন, পৌরসভার দিন হাজিরার শ্রমিক থেকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদলে বিত্তশালী হয়ে উঠা মিরাজুলকে এলাকার সবাই ভালোবাসেন। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ইউনিয়ন বিএনপির একটি পদও পান। তার ঘনিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়িক অংশীদার তাঁর এ উত্থানকে ভালোভাবে নেননি।
মেজবাউর অভিযোগ করেন, আগামী নির্বাচনে কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মিরাজুল। তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার কোহিনুরও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চাইছিলেন। অর্থ আর অতিরিক্ত জনপ্রিয়তার কারণেই তাঁর ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মিরাজুল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কোহিনুর, তাঁর ভাই আলতাব মাস্টার ও চাচাতে ভাই শাহজাহান গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে মামলায় মিরাজুলের ঘনিষ্ট কোহিনুর, শাহজাহান ও আলতাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল হক বলেন, দুজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের রিমান্ড চাওয়া হবে। ওসি আরও জানান, মিরাজুল লেখাপড়া জানতেন না। তাঁর সব টাকা পার্টনারদের (ব্যবসায়িক অংশীদার) কাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, পার্টনাররা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। কোহিনুর পলাতক রয়েছেন। কোহিনুরসহ অন্যদের ধরার জন্য পুলিশ কাজ করছে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ