হিন্দু মেরে আওয়ামী লীগকে কট্টর মুসলিম বানানো হচ্ছে?
ড. কালাম আজাদ * অস্ট্রেলিয়া থেকে
এর আগে একের পর এক খুন হয়েছেন তথাকথিত ‘মুক্তচিন্তা’র মানুষরা। ওই সব খুনের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে এসেছে ইসলামিস্ট কিছু জঙ্গি গোষ্ঠি। তাদের দাবি, ইসলামকে আঘাত করার অপরাধেই হত্যাকা-গুলো ঘটানো হয়েছে। সেই সব হত্যাকা-ে সরকারকেও খুব একটা ব্যতিব্যস্ত মনে হয়নি। বরং এ ধরনের হত্যাকা- এড়ানোর জন্য সরকার ‘মুক্তচিন্তা’র মানুষদেরকে ইসলামে আঘাত না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্প্রতি দুই হিন্দু হত্যার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। সংখ্যালঘুদের সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাশগুপ্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানে বর্তমান ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সাহায্য চেয়েছেন বলে ভারতীয় নিউজ এজেন্সি পিটিআই-এর খবরে বলা হয়েছে। এই সাহায্য চাওয়াটা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য খুবই খারাপ খবর। কেননা, এ কথা বাজারে চালু আছে যে, ভারত সরকারের আশীর্বাদেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে। এখন যদি আওয়ামী লীগ দেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কি ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখবে?
আসলে আমাদের দেশের আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিটি এমন একটা অবস্থাই চেয়ে আসছে অনেক দিন ধরে। কারণ, দেশে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। হরতাল-অবরোধের দিনও শেষ। পেট্রল বোমা মেরেও কাজ হয়নি। তাহলে সরকার পরিবর্তনের পথটা কী? আওয়ামী লীগের উপর ভারত সরকারকে চটিয়ে বিরোধী শক্তিটি কি এই পথটাই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে?
আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে কিছুদিন আগে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন কর্মকর্তা ও বিএনপির একজন নেতার মধ্যে একটি বৈঠক হয় বলে খবর বেরিয়েছিল। পরে ওই খবরের সত্যতা নিয়ে বিতর্ক হলেও, ঐ ইসরায়েলি কর্মকর্তা তাদের ওয়েব পেজে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারকে কট্টর ইসলামপন্থী বলে অভিহিত করেছিলেন এবং এই সরকারকে উৎখাতে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এখন কি তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হিন্দু হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হিন্দুবিদ্বেষী কট্টর মুসলিম দল হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে? অথচ আজীবনের শত্রু বিএনপি নিজেই আওয়ামী লীগকে নাস্তিক বলতেও ছাড়েন না।
যাই হোক, চট্টগ্রামে এসপি-পতœী হত্যা ছাড়া এসব হত্যাকা-ের সবগুলোরই দায়দায়িত্ব স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আইএস বা এধরনের কোনো ইসলামিস্ট জঙ্গি গ্রুপ। কিন্তু তাদের পেছনে যে মোসাদ বা অন্য কোনো বিদেশি এজেন্সির হাত নেই তার নিশ্চয়তা কী?
লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গবেষক