কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ জার্মান দূতাবাসের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট মানবাধিকার কমিশন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্দীদের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ আসামি রাখা হয়েছে ঢাকায়। আর জার্মান নাগরিককে কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে ও তাকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে জার্মানির সরকারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। দেশের ৬৪টি কারাগারের বেশিরভাগ সময়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী রাখা হয়। তাদের প্রয়োজনীয় সুবিধাও দেওয়া হয় না।
সম্প্রতি সরকার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূলে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার হয় প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তি। তাদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়। সম্প্রতি ব্যাপক সংখ্যক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দীদের চাপ বেড়েছে।
বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান জানার পর বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, বন্দীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ড. মিজান বলেন, সাঁড়াশি অভিযানে আটকদের নিয়ে বাণিজ্য চলছে এমন অভিযোগও আমাদের কাছে আসছে। আর বন্দীদের উপর এর কতটুকু প্রভাব পড়ছে তা দেখে বোঝা যায়। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সেবার মান নিশ্চিত করার জন্যও সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ২০০৬ জন। আর বৃহস্পতিবার কারাবন্দী ছিল ৭৩২৮ জন। যা তিনগুণেরও বেশি।
ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বন্দী থাকলেও দেশজুড়ে চলমান পুলিশের বিশেষ অভিযানের কোনো প্রভাব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পড়েনি বলে তিনি মনে করেন। তবে কারাগারের ভিতরের হাসপাতালের চিত্র দেখে আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি বন্দী। এত বন্দী থাকলে কতটা সেবা দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি কারাগারের ভিতরে হাসপাতালেও যান। সেখানে কারাগারের ভিতরে অবস্থিত হাসপাতালের চিত্র দেখে আহত হন।
সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার-বাণিজ্য নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মিজানুর রহমান। এই কারণে তার সমালোচনা করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এই ব্যাপারে মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হয়তো না বুঝে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো আর না বুঝে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেননি।
এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যখন এই অবস্থা এর একদিন আগেই কাশিমপুর কারাগারে বন্দী জার্মান নাগরিক শেমিজওয়া তমাস গোরাওতোভিজের উপর অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ করেছে ঢাকায় জার্মানির দূতাবাস। তারা বলেছেন, কাশিমপুর কারাগারের বন্দী জার্মান নাগরিক শেমিজওয়া তমাস গোরাওতোভিজকে অমানবিক আচরণ ও মারধর করা হয়েছে।
জার্মান নাগরিকের এই মামলা দেখভালের দায়িত্বে থাকা কনস্যুলের অফিসার সম্প্রতি গোরাওতোভিজকে দেখতে কাশিমপুর কারাগারে যান। ওই সময় কনস্যুলের আটক জার্মান নাগরিকের দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান বলে জানিয়েছেন। হাত-পায়ে বড় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। বাঁ হাঁটু প্রচ- ফুলে গেছে। এতে তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। এই অবস্থা দেখার পর বুধবার জার্মান সরকারের এ অভিযোগের বিষয়টি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গোয়েন্দা শাখায়ও এই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়। তাদের পাঠানো
চিঠিতে বলা হয়, কারা কর্তৃপক্ষ যদিও বলেছে, গোরাওতোভিজকে যথেষ্ট সমাদর করা হয়েছে। বাস্তবে গত ৫ মে শেষ হওয়া পাঁচদিনের রিমান্ডের পরই এসব আঘাতের চিহ্ন তার দেহে দেখা যায়। গোরাওতোভিজের প্রতি এ ধরনের অমানবিক আচরণের কঠোর প্রতিবাদ জানায় জার্মানি। গোরাওতোভিজের সুরক্ষায় এবং স্বাস্থ্যের প্রতি নজরদারি বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানায় জার্মানি। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অবশ্য বলেছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। জঙ্গিদের আটক করা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে। এই অভিযান চলার কারণে আশা করছি ব্যাপক সংখ্যক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। জঙ্গিদের দমন করার পাশাপাশি অন্যদেরও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এই কারণে বন্দীদের কারাগারে রাখতে হবে। এরতো বিকল্প নেই। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম