২৬ জুন মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্প নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন : আগামী ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) ও বাস ্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় প্রকল্প দুটির কাজের উদ্বোধন করবেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের সূচনা করবেন। এ সূচনার মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল প্রকল্পটি নতুন গতি পাবে এবং নির্দিষ্ট সিডিউল অনুযায়ী চলমান কাজ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা, তৃতীয় পর্যায় থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে। ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
ইতোমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন শুরু হয়েছে বাস্তবায়ন। ইতোমধ্যে ডিপো উন্নয়নের কাজও শুরু হয়েছে। জাইকা মেট্রোরেল রুট-১ ও রুট-৫ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের ৮টি প্যাকেজের মধ্যে ৬টির দরপত্র আহ্বান কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্যাকেজের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানান তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। জাইকা প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে প্রায় ১৬ হাজার ৬শ কোটি টাকা। মেট্রোরেলের রুট হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড (উপর দিয়ে)। এতে থাকবে ১৬টি স্টেশন। প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে এ রুটে।
সড়ক পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল রুট-৬ এর পাশাপাশি এমআরটি-১ ও এমআরটি-৫ রুট দুটির নির্মাণ প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল রুট-১ হচ্ছে গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটির দীর্ঘ। প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটারের কাজ করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে (আন্ডার গ্রাউন্ড)।
অপরদিকে মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেল-৫। এ রুটটি নারায়ণগঞ্জের ভুলতা হতে গাবতলী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাটারা হতে গাবতলী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার হবে মাটির নিচে।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বিআরটি প্রকল্প। এ প্রকল্প বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতিমূলক সকল কাজ সম্পন্ন করেছি। বাস্তবায়ন কাজও শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিআরটি চালু হবে। প্রকল্পটি গাজীপুর টার্মিনাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। বিআরটি রুটে থাকবে ২৫টি স্টেশন। এ পথে নির্মাণ করা হবে ৬টি ফ্লাইওভার।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার থাকবে এলিভেটেড (উপর দিয়ে) বিআরটি লেন। ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতলে। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাসগুলোয় ভাড়া আদায়ে থাকবে ইলেক্ট্রনিক স্মার্টকার্ড।
বিআরটি প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা ১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড অর্থায়ন করছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংরক্ষিত আলাদা লেনের মাধ্যমে উভয়দিকে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার সম্ভব হবে। প্রতি তিন মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে। প্রকল্প দুটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে জানিয়ে কাদের বলেন, প্রকল্প এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বিধায় প্রকল্প নির্মাণকাজ চলাকালীন যানজট হবে না।
এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এমএএন ছিদ্দিক, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ, বিআরটি প্রকল্প পরিচালক একরামুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম