চোরাচালান প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন : সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানবিরোধী অভিযান গতিশীলের পাশপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। এসব এলাকায় কোনো জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কর্মকর্তা চোরাচালানে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির ৫৬তম সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় যাতে কোনো কর্মকর্তা এক বছরের বেশি সময় অবস্থান করতে না পারে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয় সভায়।
বৈঠক সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকায় কর্মরত কোনো কর্মকর্তা যাতে এক বছরের বেশি সময় যাতে না থাকতে পারে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চোরাচালান মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে সব কটি সংস্থা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। অভিযান নিয়মিত চলবে। হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ৩১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আর ১ হাজার ৪৮৭ কোটি মূল্যের মালামাল জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, চোরাচালান মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ও মানবপাচার নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে কক্সবাজার, যশোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় কিছু অসাধু কর্মকর্তা পোস্টিং নিয়ে থাকেন। উচ্চ পর্যায়ে ‘ম্যানেজ’ করে এক সীমান্ত থেকে অন্য সীমান্ত এলাকায় পোস্টিং নিচ্ছেন। অথচ এসব কর্মকর্তার সঙ্গে মানবপাচারকারী ও চোরাকারবারিদের রয়েছে বিশেষ সখ্য। সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রবণ এলাকায় কর্মরত কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করা মাত্রই তারা জোর তদবির করে। যে কোনোভাবে এসব কর্মকর্তাকে স্বস্থানে রাখতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি বা চোরাচালানিরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এজন্য মোটা অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট স্থানে থেকে যাচ্ছেন।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, চোরাচালন প্রতিরোধে সরকার জিরো টলারেন্সে থাকবে। চোরাচালানে যদি কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তা কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সীমান্ত এলাকায় কোনো কর্মকর্তা যাতে এক বছরের বেশি না থাকতে পারেÑ সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তারা যেন তথ্য গোপন করে পুনরায় এসব স্থানে বদলি হতে না পারে, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চোরাচালান দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর সে বিষযে জনসচেতনতা গড়ে তোলার গুরুত্বারোপ করা হয়। সেজন্য তথ্য মন্ত্রণালয় চোরচালান প্রতিরোধের বিষয়টি জনসাধারণের মধ্যে এসএমএস (ক্ষুদে বার্তা) ও গণমাধ্যমে বহুল প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এসএমএস (ক্ষুদে বার্তা) প্রচারের জন্য বিটিআরসি ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়াও চোরাচালান প্রতিরোধে সশস্রবাহিনী বিভাগ, বিজিবি, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমম্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ নেবে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটিসমূহের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করার পাশাপাশি প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম