টাঙ্গাইলে ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁতিদের
আব্দুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল : এবছর ঈদে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়িতে বৈচিত্র আর নতুনত্ব এনেছে তাঁতীরা।বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ী বুননে ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁতীদের। বাহাড়ি ডিজাইনের কারনে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির প্রতি বাঙ্গালী নারীর আলাদা টান ব- বছর ধরেই। যা দিনদিন যেন বেড়েই চলেছে। তাইতো দেশের সীমানা ছাড়িয়ে টাঙ্গাইল শাড়ির কদর এখন বিশ্বজুরে। আর ঈদ কিংবা পুজা পার্বনে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা বেড়ে যায় অনেকগুন বেশি। এই সময়টা ক্রেতার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁতিদের। এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শাড়ি বুনন নিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে তারা।
প্রকৃতির সঙ্গে রং আর ডিজাইনের মিল রেখে শাড়ি বুনন ও তা ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে এবার শাড়ি ব্যবসার দিকে নজর দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সুতি জামদানী, সফ্টসিল্ক, ধানসিঁড়ি, বালুচুরি, গ্যাসসিল্ক, স্বর্নকাতান ও দোতারির মত অসংখ্য শাড়ী বুনন নিয়ে ব্যস্ত এখন টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লীগুলো। প্রতিটি বাড়িতেই নিঁপুণ হাতে এসব শাড়ি বুননের কাজ করছে কারীগররা। ছেলে থেকে বুড়ো কারো যেন দম ফেলার সময়টুকুও নেই।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল গ্রামের শাড়ি ব্যবসায়ী ও তাঁতি রতন বসাক জানান, ক্রেতার চাহিদার দিকটা মাথায় রেখে এবার সিল্কের দিকে মন দিয়েছি। সিল্কের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি উৎপাদন করছে কারিগররা।
এসব শাড়ির ব্যপক চাহিদা রয়েছে এবার ঈদে। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় বিখ্যাত তাঁত পল্লী পাথরাইল, চ-ি, বাজিতপুর ও পুটিয়াজানির মত অন্তত ১৫টি গ্রামে ঈদে শাড়ির চাহিদা মেটাতে দিনরাত পরিশ্রম করছে তাঁতি রা।
তবে পাওয়ার লুম আর চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে প্রান্তিক তাঁতীদের পক্ষে। একই গ্রামের তাঁতী ও কারিগর আন্নারানী বসাক প্রতিবেদককে জানান, একটি শাড়ি উৎপাদন করতে আমাদের সময় লাগে দইি থেকে তিনদিন। আর খরচ পড়ে ২৫ থেকে তিন হাজার টাকা। যা বাজারে বিক্রি হয় ৩৪০০ থেকে ৩৬০০ টাকা পর্যন্ত।
গুন ও মানের দিক দিক দিয়ে পার্থক্য থাকলেও দেখতে একইরকম একটি শাড়ি উৎপাদন করতে পাওয়ারলুম বা চিত্তরঞ্জনে সময় লাগে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টা। সুতাসহ সবমিলিয়ে খরচ পড়ে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এ অবস্থায় আমাদের মত ক্ষুদ্র তাঁতীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে দিনদিন টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির চাহিদা বৃদ্ধিও পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিকের অভাবও প্রকট হচ্ছে। তাঁত শ্রমিক মিজানের মতে, একটি ভাল মানের শাড়ি বুনন করতে দুই থেকে তিন পর্যন্ত সময় লাগে। তাতে যে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় তার চেয়ে দিগুন বা তিনগুন পারিশ্রমিক পাওয়া যায় সিএনজি বা ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালিয়ে। এছাড়াও নানা কারনে শ্রমিকরা পেশা পরিবর্তন করছে।
টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির অন্যতম ডিজাইনার ও পাইকারী শাড়ি ব্যবসায়ী নীল কমল বসাক এনটিভি অনলাইনকে জানান, বর্ষা মৌসুমে ঈদ। তাই প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে রং বাছাই আর ডিজাইনের দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দাম যাতে ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে থাকে তাও মাথায় রাখছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের লোড শেডিং না থাকলে আর দক্ষ শ্রমিকের অভাব না হলে ক্রেতার চাহিদামত শাড়ি সরবরাহ করা কোন কঠিন বিষয় না। ক্রেতার চাহিদা পুরনে কারিগররা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে বলেও জানান এই শাড়ি ব্যবসায়ী।