ভালুকায় কাঁঠালের বা¤পার ফলন
সফিউল্লাহ আনসারী, ভালুকা : ময়মনসিংহ জেলার সর্ব দক্ষিনের উপজেলা ভালুকা। উচু-নিচু ও লালমাটির বনাঞ্চলে ঘেরা ভালুকায় প্রচুর পরিমানে আবাদ হয় কাঁঠালের। ভালুকা উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নের গ্রামগুলোকে কাঁঠালের ভাল ফলন হয়, যা এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে রপ্তানি হয়। কাঁঠাল একটি অর্থকরি ফল হওয়ায় উৎপাদিত কাঁঠালের বেশীর ভাগ ঢাকায় বাজারজাত হলেও ভালুকার সুস্বাধু কাঁঠাল দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশও রপ্তানী হচ্ছে,তবে তা খুবই কম।
বিগত বছরের মতো এবারও ভালুকার উথুরা, মল্লিকবাড়ী, হবিরবাড়ী, রাজৈ, বিরুনিয়া, ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কাঠালের বা¤পার ফলন হয়েছে। বা¤পার ফলনের সঙ্গে কাঁঠালের দামও ভালো বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশত কৃষকের বাগানে কাঁঠালের প্রচুর ফলন হয়েছে।মৌসুমের শুরুতে বাজার দর ভাল হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তা কমে যাওয়ায় কম লাভবান হন কৃষক।
বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ সারা বাংলাদেশে ভালুকার কাঁঠালের সু-খ্যাতি রয়েছে। তাই দেশজুড়ে এখানকার কাঁঠালের চাহিদা দেশের অন্য এলাকার তুলনায় একটু বেশী। বন্যার ঝুঁকি না থাকা এবং মাটির উর্ব্বরতার কারনে এখানকার কাঠালের ফলন বেশী ও স্বাদও ভিন্ন।ভালুকায় দু’ধরনের কাঁঠালের আবাদ হয় বলে জানান কৃষি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল ৬০-১০০ (কাঁচা) ও ২০-৬০/৭০ (পাঁকা) টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাজারে কাঠালের আমদানী বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম হ্রাস পেয়েছে। তবে কাঁঠালের দাম কাঁচা ও পাঁকা ভেদে কম বেশী হয়। কাঁঠাল দ্রুত পচনশীল হওয়ায় কোন কোন সময় লাভের চেয়ে ক্ষতির অংক কষতে হয়।আর এ কারনেই কাঠাল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দীর্ঘদিনের দাবী এ এলাকার কাঠালচাষি ও পাইকারদের। সরকারি বা বেসরকারি কোন পন্থায় প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাবস্থা না থাকায় কৃষকরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংরক্ষণাগার স্থাপন করা গেলে কাঠাল চাষ হয়ে উঠতে পারতো অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার একটা মাধ্যম।
ভালুকায় ব্যক্তি উদ্যোগে কাঁঠালের বাগান গড়ে উঠলেও বানিজ্যিকভাবে কাঠাল চাষে উদ্যোগ নেই।বাণিজ্যিক উৎপাদনে এ অঞ্চলের কাঠালচাষ ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। ভালুকায় প্রকৃতি ও পরিবেশগতভাবে লালমাটির উচু জায়গা হওয়ায় কৃষকদের একটি সম্ভাবনাময় কাঠাল বাগানের কৃষি অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব। কাঁঠাল চাষে আলাদা যতœ ও খরচ না থাকায় অল্প বিনিয়োগে লাভ জনক আবাদ হিসেবে সাফল্য পাওয়া যায়। ভালুকার কাঁঠাল বিদেশে রপ্তাণী করেও বেশ সফলতা পাওয়া যেতে পারে,যদি সরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়। হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের কাঁঠালের বেপারি মো. আ. সালাম ও তোফায়েল আহমেদ জানান, বৈরি আবহাওয়া না থাকায় এ বছর কাঁঠালের বা¤পার ফলন হয়েছে।
প্রকৃত মূল্য পেলে সব কৃষকই লাভবান হবে। কাঁঠালের এই পাইকার আরো জানান তারা এবার ১২ লাখ টাকার কাঁঠাল ক্রয় করেছেন,যা বাগান মালিকদের থেকে নেয়া।
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সাইফুল আজম খান জানান, ভালুকায় ব্যাক্তি উদ্যোগে আবাদ হওয়া প্রায় ৫ লাখ কাঁঠাল গাছে এ বছর ১ কোটি কাঠালের ফলন হয়েছে যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কাঁঠাল আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন মোটিভেশন প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।সংরক্ষনাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ বা কোন কো¤পানী চিপস বা অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনে এগিয়ে আসলে সরকারি সহযোগীতা করা হবে।