রাজনৈতিক সংকটের সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা : এম সাখাওয়াত
আবু সাইদ : দেশের চলমান জঙ্গিহামলা নিরসনে সব রাজনৈতিক দলের এক টেবিলে বসা উচিত বলে মনে করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গিরা। গতকাল শনিবার একাত্তর টেলিভিশনসহ একাধিক মিডিয়ার কাছে তিনি এব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে আলোচনা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল আরও শক্ত হতো। তারা অপরাধী ধরতে আরও বেশি উৎসাহ পেত।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ঘটনা অন্য কোনো দেশে হলে সরকারি দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এক টেবিলে বসে করণীয় ঠিক করতো। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে সেটি হচ্ছে না।
সেনাবাহিনীর এই সাবেক কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম। এটি খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। এটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ঘটনা। এখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা সংকট ছিল। কারণ সন্ত্রাসীরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
শুক্রবার রাতে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের অন্তত দুজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন পুলিশ সদস্য। আর ২০ জন বিদেশিকে হত্যা করা হয়।
সম্প্রতি দেশে জঙ্গি হামলা বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হলো, কেন এমন হামলা হচ্ছে?
জবাবে এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, দেশে যে একটা সমস্যা আছে সেটিই তো সরকার স্বীকার করে না। রাজনৈতিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে এসব সন্ত্রাসীরা হামলা করছে। কারণ সরকার আসল হোতাদের না ধরে এসব হামলাকে রাজনৈতিক রঙ দিচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গিরা। এ কারণে রাজনৈতিক সংকট সমাধান জরুরি।
রেস্তোরাঁয় নিহত-আহতদের বিষয়ে সাখাওয়াত বলেন, এ অভিযানটি ছিল অত্যন্ত কঠিন। কারণ সন্ত্রাসী হামলায় সবাইকে বাঁচানো কঠিন। বাঁচানোর বিষয়টি আসতো যদি জিম্মিদের বিনিয়ম কোনো কিছু সন্ত্রাসীরা চাইতো। যেহেতু এখানে বিনিময় ছিল না, তাই সবাইকে বাঁচানো অসম্ভব ছিল। তারপরও ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এটি আমাদের সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক বড় সাফল্য।
হামলার নতুন নতুন ডায়মেনশন দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিরা কী এতটাই প্রশিক্ষিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিপুল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে?
জবাবে সাবেক এম সাখাওয়াত বলেন, জঙ্গিরা তো অবশ্যই প্রশিক্ষিত। তারা হামলায় নতুন ডায়মেশন আনছে। এসব মোকাবিলায় জঙ্গিদের হোতাদের ধরতে হবে। আর্টিজানের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখতে হবে কেন এ হামলা, কারা এর সঙ্গে জড়িত। পুরো ঘটনাকে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। কারণ এই তথ্য দেশবাসীর জানার অধিকার রয়েছে, যেমনটি আজ সেনাবাহিনী করেছে।
এই হামলায় অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০ জন বিদেশি নিহত হলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর প্রতিক্রিয়া তো অবশ্যই হবে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গার্মেন্ট খাতও এর শিকার হতে পারে। আমাদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিরা নতুন করে ভাবতে পারে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে পর্যটনে। সবকিছু মিলিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের এক নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠবে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ