অভিভাবকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিখোঁজ ছেলেদের সম্পর্কে পুলিশকে জানান
দীপক চৌধুরী : কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নিখোঁজ ছেলেদের সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার তাদের খুঁজে বের করে এবং বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ সম্ভাব্য সবধরনের সহায়তা দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। গণভবনের প্রবেশপথ সকাল সাড়ে ৯টায় খুলে দেয়া হলে ঈদের নামাজের পর সকল স্তরের জনগণ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে প্রবেশ করে। এ উপলক্ষে গণভবনের বিশাল আঙ্গিনা বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়। শুরুতেই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
যেসব ছাত্র দীর্ঘদিন অনুপস্থিত তাদের সম্পর্কেও পুলিশকে অবহিত করতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিখোঁজ ছেলেদের নাম পুলিশের কাছে প্রকাশের সময় অভিভাবকরা তাদের নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারেন। আমি অভিভাবকদের তাদের নিখোঁজ সন্তানদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা তাদের খুঁজে বের করতে এবং প্রয়োজনে তাদের চিকিৎসা দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবো। তিনি আরও বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের স্থান হতে পারে না।
গত সপ্তাহে গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের নামে মানুষ হত্যার মতো জঘন্যতম কর্মকা- আর কি হতে পারে। নামাজের সময় নামাজ না পড়ে মসজিদে নববীতে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা ইসলামের নামে কোন ধরনের ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আসলে তারা ইসলামের শত্রু।
নিখোঁজদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রতিটি গ্রাম ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে এবং একসাথে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর প্রতি জঙ্গিদের কোনো বিশ্বাস নেই। তারা তাদের আল্লাহর চেয়েও শক্তিশালী মনে করে। কাজেই তারা কখনও বেহেশতে যাবে না। তারা দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মান্ধরা শরিয়া আইন বাস্তবায়নের দাবি এবং মানুষের তৈরি আইনের বিরোধিতা করেন। তিনি প্রশ্ন রাখেনÑ তাহলে কেনো তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে মানুষের তৈরি অস্ত্র, বোমা, প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
ইসলামকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কোনো নিরীহ মানুষকে হত্যা বরদাশ্ত করে নাÑ এমনকি অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও। একমাত্র আল্লাহই চূড়ান্ত ন্যায়বিচারক এবং তিনি কখনও অন্য কারও হাতে দায়-দায়িত্ব প্রদান করেননি।
শেখ হাসিনা কিছু স্থানীয় এবং বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা করে বলেন, তারা গত কয়েক বছর কিছু যুবকের নিখোঁজের ব্যাপারে কেবলমাত্র সরকারকে দোষারোপ করেই আসছে। নিখোঁজদের সম্পর্কে সরকারকে সঠিক কোনো তথ্য না দিয়ে শুধুমাত্র সরকারের উপর দোষ চাপাচ্ছে। তিনি বলেন, তারা যদি আমাদের সঠিক তথ্য দিত আমরা তাদের উদ্ধারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতাম।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ভিক্ষুক ও দুস্থ জনগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও মশিউর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি ও ফারুক খান এমপি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বন্ধুপ্রতীম বিভিন্ন দেশের দূতদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।