তিন জঙ্গিনেতার বিচারের অনুমতি পেতে আদালতের তাগাদা চাইবে প্রসিকিউশন
মাহমুদুল আলম : তিনটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ তিন নেতার বিচারে সরকারের অনুমতি পেতে আবারও আদালতের তাগাদা চাইবে প্রসিকিউশন। গতকাল এই প্রতিবেদককে এ সংক্রান্ত তথ্য জানান ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু।
অনুমোদন মিলছে না বলে প্রায় দুই বছর ধরে ঝুলে আছে নিষিদ্ধঘোষিত এই তিনটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ তিন নেতার বিচার। তিন জঙ্গিনেতার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তিনটি মামলা করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো অভিযোগ আমলে নিতে পারেন না আদালত।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে এসব মামলার বিচার শুরুর অনুমোদন দিতে সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই বছরেও জবাব আসেনি। কোনো কোনোটির জন্য অপেক্ষা তিন বছরেও গড়িয়েছে। এসবের প্রেক্ষিতে আবদুল্লাহ আবু বলেন, সরকারকে আবারও তাগাদা দিতে আমরা আদালতে আবেদন করব। আগামীকালও (আজ বুধবার) এই আবেদন করতে পারি। যাতে যত দ্রুত সম্ভব এই মামলার বিচারিক কাজ শুরু করা যায়।
এই তিন নেতা হলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী, জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান ও হিযবুত তাহ্রীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ। জেএমবির প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান ও আনসারুল্লাহর প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী কারাগারে আছেন। আর হিযবুত তাহ্রীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন।
সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৫ মে জেএমবির শীর্ষ নেতা সাইদুর রহমানসহ তার সংগঠনের তিন সক্রিয় সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয় রাজধানীর কদমতলি থানায়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৭ আগস্ট তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ঢাকার মহানগর দায়রা আদালত অপরাধ আমলেও নেন। মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয় ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে, যেখানে বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি। পাঁচজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ওই আদালত এক আদেশে বলেন, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার অপরাধ আমলে নিয়েছেন। তাই সরকারের অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ঢাকার মহানগর আদালতে ফেরত পাঠানো হোক। ফলে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া সেখানেই থেমে গেছে।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে সরকারের অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো জবাব আসেনি। এ বছরের ২৮ মার্চ সর্বশেষ চিঠি পাঠানো হয়। সাইদুর ২০১০ সালের ২৫ মে গ্রেফতার হন। সেই থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
জঙ্গি তৎপরতা, সরকার ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ডিবির পরিদর্শক মো. আবদুল লতিফ শেখ। বিচারের জন্য ওই বছরের ২৬ অক্টোবর মামলার নথি পাঠানো হয় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর সরকারের অনুমোদনের জন্য ওই আদালত থেকে প্রথম দফায় চিঠি পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আরও দুই দফা চিঠি গেছে, যার সর্বশেষটি পাঠানো হয় এ বছরের ২৮ মার্চ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া দিয়ে কোনো জবাব আদালতে আসেনি। সরকারের অনুমোদনের জন্য এ পর্যন্ত ১১ বার মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল। আসামিরা এজলাসে এসেছেন আর ফিরে গেছেন।
একই মামলায় গ্রেফতার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্য জুন্নুন শিকদার, কাজী রেজোয়ান, নাইমুল হাসান ও জাহিদুর রহমান জামিনে মুক্ত হয়ে এখন পলাতক।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে উত্তরা মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২০১০ সালে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ মহিউদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলাটি বিচারের জন্য ওই বছরের ২১ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। তখনই আদালত থেকে মামলার অনুমোদনের প্রথম দফা চিঠি পাঠানো হলেও অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র আদালতে আসেনি। সর্বশেষ ২৮ মার্চ তৃতীয় দফায় চিঠি পাঠানো হয়।
মহিউদ্দিন ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল গ্রেফতার হন। হাইকোর্ট থেকে ২০১১ সালের ৩ মে জামিন পান তিনি।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বিচার শুরুর জন্য সরকারের অনুমোদন আটকে থাকার ব্যাপারে তিনি শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ ধরনের কোনো চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি। সম্পাদনা : সুমন্ ইসলাম