হিযবুত তাহরীরের ৪৯ জঙ্গির খোঁজে র্যাব-পুলিশ
বিপ্লব বিশ্বাস : ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। অনেকটা প্রকাশ্যেই তারা তৎপর রয়েছে। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া যুবকদের টার্গেট করে পরিচালিত হচ্ছে তাদের কর্মতৎপরতা। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টার, লিফলেট বিলি করছে তারা। এদিকে হিযবুত তাহরীরর ৪৯ জঙ্গির খোঁজে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা যায়, বছর দুয়েক ধরে হিযবুত তাহরীরের নারী সংগঠন কাজ করছে। বাড়ছে তাদের নারী কর্মীর সংখ্যা। দলের কর্মীদের দাবি- সবকটি বিভাগীয় শহরে তাদের সংগঠন রয়েছে। কোনো কর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলে, কিংবা সংগঠনের যেকোনো খবর মিডিয়ায় প্রকাশের লক্ষ্যে কর্মীরা নিয়মিত গণমাধ্যম অফিসে গিয়ে হাতে হাতে প্রেস রিলিজ পৌঁছে দিচ্ছে।
সূত্র মতে, হিজবুত তাহরীরের ৪৯ জঙ্গিকে গ্রেফতারে মাঠে আছে সক্রিয় দল। গুলশান হামলার পর র্যাব ও পুলিশ তাদের গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযানে নামে। আত্মগোপনে থাকা এ সব জঙ্গি খোলস পাল্টিয়ে হিযবুতের ব্যানারে ব্লগার, শিক্ষক, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত, সেবক, লেখক, প্রকাশক, পুলিশ পরিবারের সদস্য এবং হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা করছে। গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে আল মাসুদ, তাইফুল, জোবায়ের, হিমেল, খলিলুর, মোশাররফ, রাশেদুল হক, সবুজ ওরফে বাবু, পারভেজ, ইরফান, ফয়সাল, শামীম, শাহ নেওয়াজ, নওয়াজিশ, আল আমিন, আসিফুর, তৌফিকুল, শহীদুল, শাকিব, মাহিনুজ্জামান, ফেরদৌস, আসিফ ইকবাল, মুহিউদ্দিন, মাইন উদ্দিন, নূর মোহাম্মদ, রাশেদ আহমেদ, মুনতাসির, নাজমুল হুদা, জাহেদুল আলম, মিনহাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ হোসেন, হামিদুল্লাহ, পারভেজ শিকদার, মোসাদ্দেক, হারেস, প্রিন্স, সায়েদ ওরফে আদেল, রনি, অর্ণব, বাপ্পী, জাকির, রিটন, সিফাত, শিবলী, শুভ, তাহমিদ, তানজিল, সাদ ও হাফিজ নামে ৪৯ জনের নাম। এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পর জামিনে পলাতক রয়েছে।
সংগঠনটির কর্মীদের দাবি, বর্তমানে রাজধানীর ৫০ জন কর্মী কারাগারে রয়েছে। ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তাদের তিন শতাধিক কর্মী আটক হয়েছে। র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তথ্য মতে, র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১১ বছরে ১ হাজার ১০০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে হিযবুত তাহরীর কর্মীও রয়েছে।
একাধিক সূত্র মতে, ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে শরিয়াহ আদালতের বিচারপতি শায়খ তাকী-উদ্দিন আন-নাবহানী ১৯৫৩ সালে হিযবুত তাহরীর প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে দলের আন্তর্জাতিক নেতা আতা আবু রাশতা জর্ডানে থেকে এর কার্যক্রম চালাচ্ছেন। মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর শাখা রয়েছে। চরমপন্থী মতাদর্শ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে অনেক দেশেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী কাউন্টার টেরোরিজম এক্সচেঞ্জে (সিটিএক্স) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) চেয়েও ভবিষ্যতে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে হিযবুত তাহরীর।
এই সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নজরদারি চাতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইএস ও হিযবুত তাহরীরের মধ্যে মতাদর্শগতভাবে তেমন ফারাক নেই। আইএসের সঙ্গে তাদের ফারাকটা কেবল কৌশলগত। বাংলাদেশে ২০০১ সালে ধানমন্ডিতে একটি সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে হিযবুত তাহরীর কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর সরকার ‘জননিরাপত্তার স্বার্থে’ দলটি নিষিদ্ধ করে। এরপরও বিভিন্ন সময় সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। পুলিশের নাকের ডগায় তারা রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্স করে হিযবুত তাহরীর সংগঠনের শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ওইসময় তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি