শতাধিক নওমুসলিম জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত! নওমুসলিমদের দলে টানাই জঙ্গি নেতাদের টার্গেট
বিপ্লব বিশ্বাস : মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি আর পাঞ্জাবি পরা মুসলিমদের ছোট একটি অংশ এতদিন জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে গেফতার হওয়া এসব জঙ্গির বেশিরভাগই মাদরাসা শিক্ষিত। একসময় তারা সারা দেশে নাশকতা চালালেও গোয়েন্দা নজরদারীর কারণে এখন অনেকটাই ব্যর্থ। পুলিশকে ফাঁকি দিতে তাই জঙ্গি সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ কর্তারা এবার তাদের পরিকল্পনা পাল্টিয়েছে। দল ভারী করতে এবার তাদের টার্গেট হিন্দুসহ ভিন্ন সম্প্রদায়ের যুবকদের।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, টুপি আর পাঞ্জাবি পরা লোকজন প্রকাশ্যে কোনো বৈঠকে বসতে পারে না। একসাথে কয়েকজন কোথাও যেতেও পারে না এবং থাকতেও পারে না। পুলিশের সন্দেহ হলে হুট করে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ফলে এসব জঙ্গি সংগঠনের কর্মকা- একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে। কোনোভাবেই তারা পুলিশের চোখ এড়িয়ে চলতে পারছিল না। তাই তারা হিন্দুসহ ভিন্ন সম্প্রদায়ের যুবকদের টার্গেট করছে। এদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে নিজেদের জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় কর্মী বানাচ্ছে! তাদের কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেও দেওয়া হচ্ছে ভুল ব্যাখ্যা।
সূত্রটি আরও বলছে, শুধু বুঝিয়ে নয় অনেক সময় বিশাল অংকের টাকা দিয়ে ভিন্ন ধর্মীদের জঙ্গি সংগঠনে টেনে নিচ্ছে তারা। এরকম শতাধিক নওমুসলিম জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দেশে বিভিন্ন এলাকায় নাশকতাসহ বোমাহামলা ও গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। যদিও এ ধরনের কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। আটক আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্যদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যাবে বিস্তারিত।’ তবে পুলিশ অস্বীকার করলেও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে গত ১১ জুলাই আটক আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের চার সদস্যের মধ্যে মুছা ইবনে উমায়ের (২৫) ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। তিনি সংগঠনটির বায়তুল মাল সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, মুছা হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। এর আগে মুছা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মুছার বাবার নাম অরুণ কান্তি দাস। তাদের বাড়ি পটিয়া উপজেলায়। পুলিশ আরও জানায়, মুছা সিইপিজেডে ইয়ং ওয়ান গার্মেন্টে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে কমর্রত ছিলেন। ধর্মান্তারিত হওয়ার পর মুছা পরিবার থেকে বিচ্যুত হয়ে যান।
পরে অবশ্য মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘মুছা হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিল। বছর দুয়েক আগে সে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে সংগঠনটির বায়তুলমাল সম্পাদক বলে জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মিল-কারখানায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর জঙ্গিরা হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল।
অন্যদিকে, গুলশান ২-এর হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিহামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের ছবিসহ নাম প্রকাশ করা হয়েছে তাদের একজন জাপান প্রবাসী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। সে হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে, তার প্রকৃত নাম সুজিত দেবনাথ। সুজিত কড়ইগ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী জনার্ধন দেবনাথের ছেলে।
সুজিতের বাবা জনার্ধন জানান, গত ১৪ মাস আগে জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফের বাসায় এসে সুজিত আমাদের খবর দিলে আমরা সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি। সুজিত জাপান চলে যাওয়ার পর গত এক বছর আগে ফোনে সর্বশেষ কথা হয়েছিল, তবে সে নিখোঁজ কি-না সেটি আমরা জানি না। তিনি আরও জানান, জিনদপুর ইউনিয়নের হুরুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে একই উপজেলার লাউর ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে সুজিত। এরপর সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে ২০০১ সালে জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে সেদেশের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকির পাসপোর্ট নম্বর টিকে ৮০৯৯৮৬০। সুজিত জাপানেই হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তারিত হয়ে জাপানি এক মেয়েকে বিয়ে করে। বর্তমানে সুজিত ওরফে সাইফুল্লাহ চার ছেলে এক কন্যা সন্তানের জনক বলে জানা গেছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি