নিখোঁজ তিনজনের পরিবারও ‘নিখোঁজ’
বিপ্লব বিশ্বাস : গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ঢাকার তিনজনের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ এই ১০ যুবকের একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। নিখোঁজদের দুজন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির। নিখোঁজ ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ খানের বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। আর আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম পান্থপথের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
এই দুই বাসায় গিয়ে ওই পরিবারগুলোর কাউকে পাওয়া যায়নি। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও প্রতিবেশিরা বলছেন, তারা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা কোথায় আছেন সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আশরাফের বাসা পান্থপথের একটি বহুতল ভবনের এক ফ্ল্যাটে। গতকাল বিকালে ওই ভবনে গিয়ে খোঁজ করলে জানা যায়, কেউ বাসায় নেই। ওই ভবনের এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, আশরাফ প্রায় এক বছর এ বাড়িতে আসেন না।
তবে তার বাবা-মা ও বোন থাকতেন। ঈদের আগে তারাও (দেশের বাইরে) চলে গেছেন। এই ভবনের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজু আহমেদ বলেন, নিখোঁজ ১০ যুবকের মধ্যে আশরাফ আছেন বলে তিনি জেনেছেন। তবে তাকে তিনি চেনেন না। আশরাফের বাবা একজন আইনজীবী এবং ফ্ল্যাট মালিকদের সভায় তিনি আসেন। এর বেশি তাদের সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই।
আশরাফের পরিবারের সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ওসি মো. ইকবাল বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। অন্যদিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই ইব্রাহিম ও জুনায়েদের পরিবার বছরখানেক ধরে বিদেশে আছেন বলে জানান ওই ভবনের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শাহাদত হোসেন বাচ্চু জানান। তিনি বলেন, ইব্রাহিম ও জুনায়েদের বাবা মুনির হাসান খান সৌদি আরবে থাকতেন। প্রায় এক বছর ধরে মনির হাসান খানের পরিবার দেশের বাইরে রয়েছেন। একবার মনির সাহেবের সঙ্গে তার দুই ছেলেকে দেখেছিলাম।
ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ খান আপন দুই ভাই।তাদের শারীরিক বর্ণনায় তিনি বলেন, তিনি (মনির) দেখতে বেশ লম্বা, মুখে দাঁড়ি আছে। ছেলেরাও তার মতোই লম্বা ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বেশিদিন ঢাকায় থাকতেন না। ওই ভবনের কেয়ারটেকার আবদুর রহমান জানান, মনির হোসেনের মেয়ের জামাতা পরিচয়ে এক ব্যক্তি গত এপ্রিলে ফ্ল্যাটের সার্ভিস চার্জের টাকা দিয়ে গেছেন। মে ও জুন মাসের সার্ভিস চার্জের টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। মো. তসলিম নামে সেখানকার এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ওই ফ্ল্যাটের লোকজন প্রায় এক বছর হবে বাসায় নেই। আগে সেখানে একজন মহিলা তার ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকে বলে শুনেছি। তার ছেলে-মেয়েরা বাসায় থাকলেও তেমন কারও সঙ্গে মিশত না।
আর ধর্মান্তরিত মুসলিম মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি জাপান প্রবাসী ছিলেন বলে তার পরিচিতরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সিলেট ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র সজিত দেবনাথ ২০০১ সালে জাপান যাওয়ার পর সেখানে স্থায়ী হন এবং সেখানেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ওই নাম নেন। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ অন্তত ২২ জন নিহত হন। ওই হামলায় অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে তাদের পরিবারের ভাষ্য। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম