স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও সাংস্কৃতিক নীতিমালা তৈরি হয়নি
রিকু আমির : স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও সাংস্কৃতিক নীতিমালা তৈরি হয়নি বাংলাদেশের। বর্তমানে এ নীতিমালা তৈরিতে কোনো পদক্ষেপও নেই সরকারের।
১৯৮২ সালে মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কনভেনশনে প্রতিটি রাষ্ট্রকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বিষয়গুলো চিহ্নিত করে নীতিমালা তৈরির তাগিদ দেওয়া হয়। এই নীতিমালার উপযোগিতা সম্পর্কে বলা হয়েছিল, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির আত্মিক, বস্তুগত, বৃদ্ধিগত, আবেগগত, চিন্তা ও কর্মধারার প্রকাশ। একমাত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ দিয়েই একটি দেশ ও জাতি তার স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যতা রক্ষা করতে পারবে। এটি কার্যকর করতে জাতিসংঘ ২১ মে ‘বিশ্ব সংস্কৃতি দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। এটির উপযোগিতা অনুভব করে বাংলাদেশেও। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে নয়, দেশের রাষ্ট্রচিন্তকদের উদ্যোগে। স্বাধীনতার প্রায় ১ যুগ পরে ১৯৮৮ সালে জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানকে চেয়ারম্যান এবং ড. আলাউদ্দিন আল আজাদকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় সংস্কৃতি কমিশন’ গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, বেগম লায়লা আরজুমান্দ বানু, এমকে আলম চৌধুরী, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, ড. আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন, সাঈদ আহমদ, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ড. এনামুল হক, মুস্তাফা মনোয়ার, আবদুর রাজ্জাক ও ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী। তারা আন্তরিকভাবে কাজ করে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করলেও তৎকালীন সরকার তা আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এটি নিয়ে আবার আলোচনা হয়।
তৎকালীন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংস্কৃতিক নীতিমালা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন বটে। কিন্তু সেটা বেশিদূর এগোয়নি।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় কিছুটা আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত এটির কাজ হয়নি। জাতীয় সাংস্কৃতিক নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত পর্যালোচনা ও বাস্তবায়ন সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি ২০০৪ সালে তৎকালীন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমানের কাছে কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশমালা পেশ করে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
বর্তমান সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি-না সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। আর এ বিষয় নিয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কি-না, সেটিও তার জানা নেই। অতীতেও কিছু হয়ে কি-না জানেন না তিনি।
সাংস্কৃতিক নীতিমালার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘সংবিধানে তো সবই বলা আছে। তবে এর ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক খাতে কী কী পড়বে কী পড়বে না। সাংস্কৃতিক বিকাশে কোন কোন খাতে বাজেট বরাদ্দ হবে কিংবা হবে না, এর তো একটা নীতি থাকা চাই। ভিনদেশি সংস্কৃতির কতটুকু গ্রহণ করব কতটুকু করব না, তা এ নীতির আওতাভুক্ত হতে পারে। আর এতে করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করার একটা বৃহৎ বলয় পাবে। জাতির মেধা বিকাশে এ খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়বে।’
ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, সাংস্কৃতিক নীতিমালা নয়, আমি বলব সাংস্কৃতিক নীতির প্রয়োজন আছে। মেধা বিকাশ ও সুন্দর মানসিকতার জন্য যদি শিক্ষানীতি থাকে তবে সাংস্কৃতিক নীতি কেন নয়। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম