শিশু সানজিদার লাশ ২০ ঘণ্টা পর নালা থেকে উদ্ধার
মাসুদ আলম : রাজধানী মহাখালীর পয়ঃনিষ্কাশন নালার পানিতে পড়ে যাওয়ার ২০ ঘণ্টা পর ছয় বছরের শিশু সানজিদা আক্তারের লাশ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নালায় কোনো ঢাকনা না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে আরেক শিশু তামিমের সঙ্গে খেলতে গিয়ে সানজিদা পানিতে ডুবে যায়। খবর পেয়ে দুপুর তিনটায় ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান শুরু করলেও রাত ১২টা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আবর্জনা ও স্রোতের কারণে সমস্যা হওয়ায় রাতে উদ্ধার অভিযান বন্ধ রাখা হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
জানা গেছে, পরিবারের সঙ্গে মহাখালীর দক্ষিণ পাড়ার ৭৩/১২ নম্বর বাসায় থাকত সানজিদা। এই বাসা ঘেঁষে আরজতপাড়া থেকে নিকেতন পর্যন্ত গেছে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পয়ঃনিষ্কাশন নালা। নালাটি প্রস্থে অন্তত ১০ ফুট। এই নালাতেই পড়ে যায় সানজিদা। ভ্যানচালক শাহ আলম ও রুবি আক্তার দম্পতির চার ছেলেমেয়ের মধ্যে সানজিদা সবার ছোট। এটি আগে খাল ছিল; পরে পয়ঃনিষ্কাশন নালায় পরিণত হয়।
নিহত সানজিদার বাবা শাহ আলম বলেন, সানজিদা পানিতে পড়ে যাওয়ার পর শিশু তামিমই আমাদের খবর দেয়। এরপর নালায় নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের খবর দেওয়া হলেও তারা ২০ ঘণ্টা পর আমার মেয়েকে উদ্ধার করেছে। এ সময় ডুবুরিরা উদ্ধার কাজে গড়িমসি করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সানজিদার বড় ভাই রুবেল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে বাসা থেকে দৌড়ে নালায় গিয়ে তিনি দেখেন বোনের স্যান্ডেল ভাসছে। পরে পানিতে ডুব দিয়ে সানজিদাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। স্থানীয় ব্যক্তিরাও তার সঙ্গে যোগ দেন। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টাতেও সানজিদাকে না পেয়ে তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন ও কাসেম বলেন, পয়ঃনিষ্কাশন নালাটির মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পেছন থেকে নিকেতন পর্যন্ত অংশে কোনো ঢাকনা নেই। নালাটিতে ঢাকনা থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না। ২০১২ সালের শেষ দিকে নালাটি তৈরির সময় বলা হয়েছিল ঢাকনা দেওয়া হবে। কিন্তু আজও তা হয়নি। তাই গত দেড় বছরে অন্তত পাঁচজন এই নালায় পড়েছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, এটা গভীর একটা ড্রেন। সাথে আছে প্রচুর ময়লা। এই ময়লার মধ্যে ডুবুরিদের কাজ করা অনেক কঠিন। কোনোভাবে যদি মাস্ক খুলে যায় তাহলে নিশ্চিত মৃত্যু। ড্রেনটা এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রাখা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত ঢাকনা দেওয়া। তবে সেটা সম্ভব না হলেও দুই পাশে কাঁটাতার দিয়ে আটকে দেওয়া উচিত। যাতে শিশুসহ জনসাধারণ এটার কাছে যেতে না পারে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি