তাবলীগ জামায়াতে ঘাপটি মেরে থাকে দাগী অপরাধীরা
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : অপরাধ ঢাকতে কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এক শ্রেণির শীর্ষ সন্ত্রাসী, চিহ্নিহ্নত অপরাধী কিংবা ডাকাত দলের সদস্যরা তাবলীগ জামায়াতের দাওয়াতি কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী নেয়ায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে তাবলীগকে ব্যবহার করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় মসজিদের আমিরের সুপারিশে যে কেউই তাবলীগ জামায়াতে যোগ দিতে পারেন। তাছাড়া কেন্দ্রীয় মার্কাস মসজিদ থেকে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো দলের পক্ষ থেকে মসজিদে আসা মুসল্লি বা এলাকার বাসিন্দাদের দাওয়াত দিলে তাদের সঙ্গেও বেরিয়ে পড়া যায় দাওয়াতি কার্যক্রমে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার মার্কাস মসজিদে বয়ানের (ইসলামী দাওয়াত) পর দলে দলে ভাগ করে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় দলগুলোকে। এসব দলে একজনকে আমীর বানানো হয়। পরে সংশ্লিষ্ট মসজিদে উঠে রান্না বান্নার আয়োজন শেষে এলাকায় বেরিয়ে পড়ে দলটি। তাদের অবশ্য স্থানীয় একজন লোক সহযোগিতা করেন। তাকে তাবলীগ জামায়াতের ভাষায় বলা হয় রাহাবার (পথ প্রদর্শক)। এই রাহাবারের দেখানো মতে এলাকার তরুণ, যুবক ও সাধারণ মানুষকে নামাজের জন্য দাওয়াত দেয়া হয়। প্রত্যেককেই বলা হয় মসজিদে জামায়াতে নামাজে অংশ নেয়ার জন্য। এই দলটি মসজিদে যে কদিন অবস্থান করে সেই কদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জামায়াত শেষে মোনাজাতের আগে একজন লোক দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন- ইনশাআল্লাহ বাকি নামাজ বাদ ঈমান আমল সম্পর্কে বয়ান হবে আমরা সবাই বসি বহুত ফায়দা আছে।
সূত্র জানায়, আল কায়দার সদস্য সংগ্রহে তাবলীগ জামায়াতকে কাজে লাগানোর অভিযোগ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংগঠন মিডল ইস্ট ফোরামের দাবি, জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল মুজাহিদিন’ এর সব সদস্যই তাবলীগ থেকে আসা। আফগানিস্তানে সোভিয়েত হামলার পর তাবলীগ থেকেই সৃষ্টি হয় ‘হরকাতুল জিহাদ-ই ইসলামি’। দেশ ভ্রমণে ভিসাপ্রাপ্তিসহ বিভিন্নভাবে তাবলীগ সন্ত্রাসীদের সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানে যেসব সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ক্যুতে যুক্ত সবাই তাবলীগের লোক। লাহোরের একটি পত্রিকার সূত্র দিয়ে বলা হয়েছে তাদের অনেকে মার্কিন তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল মুজাহিদিনের সদস্য। এছাড়া সংগঠনের অর্থায়ন সম্পর্কেও কোথাও তারা সুস্পষ্ট কিছু বলে না। তাদের দাবি, তাবলীগে স্ব-অর্থসংস্থানে অংশ নেয় সবাই।
সন্ত্রাসী প্রসঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশে নানা ধরনের অপরাধী আত্মগোপনে তাবলীগকে ব্যবহার করছে। এই সংগঠনটির অর্থায়ন, সদস্য, কর্মকা-ের খতিয়ান সরকারকে দেয়া হয় না। এদের সুরার সিদ্ধান্তও লেখা হয় না, শোনা যায়। তবে তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ কর্তারা বলছেন, কেউ ইসলামের জন্য দাওয়াতি এ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করতেই পারে। তারা সন্ত্রাসী বা যেকোনো অপরাধী হোক না কেন। তবে তাবলীগে আসা লোকদের বিস্তারিত পরিচয় নেয়ার পদ্ধতি চালু করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
তাবলীগে যা শেখানো হয় :
ইসলামে পাঁচ স্তম্ভের কথা বলা হলেও তাবলীগে শেখানো হয়- কলেমা, নামাজ, রোজা, ইকুরামুল মুসলিমিন, সহী নিয়ত ও তাবলীগ। এই ৬ টি বিষয়ের উপর দিনভর আলোচনা হয়। দুপুরে ও রাতে খাবার খাওয়ার পদ্ধতিও ভিন্ন ধরনের। এক প্লেটে দুই তিনজন বসে খাবার খান। একেও একটা সওয়াবের কাজ ধরা হয়। অনেকে আবার নতুনদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এভাবে খাবার খেলে একে অপরের সঙ্গে হৃদ্যতা বাড়ে। বাসা-বাড়িতেও এভাবে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় তাবলীগ জামায়াতে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম