আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত ছাড়বে না বিএনপি জামায়াত প্রশ্নে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নয়
শাহানুজ্জামান টিটু : ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়ছে না বিএনপি। কেবলমাত্র উগ্র ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের প্লাটফর্মে বিএনপির সঙ্গে থাকবে না জামায়াত। তবে কৌশলগত কারণে ও ভোটের রাজনীতিতে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য অটুট থাকবে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করে বলার কিছু নেই। রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা বলে কিছু নেই, তেমনি দেশ ও জাতির প্রয়োজনে যেকোনো রাজনৈতিক দল চূড়ান্তভাবে কোনো কিছু বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করে না। তাই ভবিষ্যতে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়বে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের থাকা না থাকার বিষয়ে কথা বলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, জামায়াত প্রশ্নে আওয়ামী লীগ জাতিকে ব্লাকমেইল করছে। বিএনপিকে তো জামায়াতকে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পার্লামেন্টে বাতিল করে দিলেই তো হয়, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও ক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে। তাহলে তারা কেন নিষিদ্ধ করছে না। আর বিএনপি জামায়াতকে বাদ দিলে তারা যে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক করবে না এই গ্যারান্টিটা কী? জামায়াতের সব লোক তো আর রাজাকার না। তাদের অনেকের তো মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মই হয়নি। তাদের তো রাজনীতি করার অধিকার আছে।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আপনার স্বার্থ রক্ষার জন্য আমি আমার স্বার্থ বির্সজন দেব কেন। আমারও রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। ভোটের স্বার্থ রয়েছে। আগে আপনি বিসর্জন দেন তারপর দেখেন আমরা কী করি।
সম্প্রতি দেশে জঙ্গি হামলার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসে জামায়াত। প্রশ্ন দেখা দেয় তাহলে কি বিএনপি জামায়াতকে রেখেই জাতীয় ঐক্য চায় না দলটিকে বাদ দিয়ে ঐক্য গড়বে তারা। এরমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন নেতা জানিয়ে দেন বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ বা ঐক্য হতে হলে আগে জামায়াতকে ছাড়তে হবে। জাতীয় ঐক্য নিয়ে দুই দলের বাইরেও দেশের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে বিএনপির উপর জামায়াত ছাড়ার চাপ বাড়তে থাকে। ঠিক সে সময় বিএনপির ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা জানালেন উগ্র ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য করা হলে তাতে বাধা হবে না জামায়াত। বরং দেশ ও জাতির স্বার্থে সরে দাঁড়াতে পারে দলটি।
এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের একাংশ মনে করেন বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকার কারণে সরকারের সঙ্গে কিছু কিছু বিষয়ে একমত হওয়ার সুযোগ থাকলেও তা হচ্ছে না। বিএনপি জামায়াতকে বাদ দিলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য হতে পারে এই জুজুর ভয়ে জামায়াতকে ত্যাগ করা যাবে না এটা ঠিক না। কারণ দেশের প্রয়োজনে কোনো প্রসঙ্গ সামনে এলেই সরকার জামায়াত প্রশ্নে বিএনপিকে চাপে রেখে তাদের (আওয়ামী লীগ) অনেক অবৈধ কার্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এই সুযোগ দেওয়া উচিত না।
তবে দলের অপর একটি অংশ মনে করে জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দিলে ভোটের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। কারণ জামায়াত ভোটের রাজনীতিতে একটা ফ্যাক্টর হিসেবে মনে করেন তারা। এই অংশটি মনে করে বর্তমান দেশে যে রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে এটা আর বেশি দিন চলবে না। একটা সময় অবশ্যই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। এছাড়া জামায়াতকে বিএনপি যদি বাদ দেয় তাহলে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলবে না, এ নিশ্চয়তাও নেই। তবে তারা মনে করেন, বিএনপি সরকারের কথায় জামায়াতকে বাদ দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির কোনো প্রস্তাবে কখনো একমত হয়নি। এমন নজির আওয়ামী লীগের মধ্যে নেই। বিএনপির এই অংশটি আওয়ামী লীগকে বিশ্বাসও করতে চায় না। কারণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নে দুই দলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকোর সামনে নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ একমত পোষণ করলেও পরবর্তীতে তা তারা অস্বীকার করে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম