পত্রিকা টিভিতে জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা চায়ের টেবিলেও চলছে আলোচনা
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : সম্প্রতি দেশে বেশক’টি জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে টেলিভিশন চ্যানেলে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হচ্ছে। পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। দেশের আলেম ওলামা ও ধর্ম প্রচারকরাও এ কার্যক্রমে সামিল হয়েছেন। এতে খুব দ্রুত সচেতন হচ্ছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
চায়ের দোকানে আর আড্ডার টেবিলে চলছে জঙ্গিবাদবিরোধী আলোচনা। পাড়া মহল্লারও একই অবস্থা। এছাড়াও দেশের মসজিদগুলোতে জুমার নামাজের বয়ানেও এই প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।
এদিকে, রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধানের পর বাড়ির মালিকরা ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। অনেক বাড়িওয়ালা ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে চাইছেন না। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বরং বাসা ভাড়া দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ভাড়াটিয়ার তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গিরা প্রস্তুতির পরে আত্মপ্রকাশ করেছে। সেই প্রস্তুতির ফলাফল হিসাবে তারা সর্বোচ্চ সামর্থ্য প্রয়োগ করেছে। এই মুহূর্তেই তারা আর নতুন করে হামলা করতে পারবে না। তবুও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ চলমান জঙ্গি সংকট ও প্রস্তুতি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ বৈঠকে গতকাল শনিবার এ মন্তব্য করেন তিনি। ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি’ শীর্ষক এই বৈঠকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ টিভি সরাসরি সম্প্রচার করে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান সরকার বুঝতে পারে জঙ্গি মোকাবিলায় সম্মুখ যুদ্ধ করতে হবে না, আইনি কাঠামোও দরকার। সে অনুযায়ী আইনও হয়েছে। যেহেতু জঙ্গিরা রিক্রুটমেন্ট থেকে ট্রেনিং সবক্ষেত্রে এমনকি অপারেশনের প্রচারণার জন্যও সাইবার স্পেসকে ব্যবহার করছে, সেহেতু সাইবার আইনও হয়েছে।
অপরদিকে অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও কুমন্ত্রণায় সমাজে জঙ্গিবাদ মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা মনে করেন, তরুণদের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখনই তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গিবাদের পথ থেকে রুখতে সমাজের সবার সচেতন হতে হবে। ধর্মের যেসব ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে তা ধর্মীয়ভাবেই খ-ন করতে হবে। বাড়াতে হবে সংস্কৃতির চর্চা। শৈশব থেকেই অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারায় গড়ে উঠলে বড় হয়ে আর কেউ সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঝুঁকবে না বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
দেশে চলমান জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটি জনযুদ্ধ করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদ আয়োজিত ‘ইসলামের আলোকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম