জঙ্গিদের পরবর্তী টার্গেট ছিল নরডেক ক্লাব ও লেকভিউ ক্লিনিক
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : জঙ্গিদের হলি আর্টিজানে হামলার অভিযান সফল হলে পরবর্তী হামলা করা হবে নরডেক ক্লাবে ও লেকভিউ ক্লিনিকে। এই হামলার জন্য তাদের প্রস্তুতিও ছিল। তবে সব জঙ্গি হলি আর্টিজান ছেড়ে এক সঙ্গে নরডেকে যেত না। কয়েকজন চলে যেতো লেকভিউতে আর বাকিরা নরডেক ক্লাবে। এর বাইরেও তাদের অন্যকোনো টিম ছিলো যারা নরডেকের হামলাতে যোগ দিতো। নরডেক ক্লাবের সদস্য বিদেশিদের তারা টার্গেটের মধ্যে রেখেছিলো। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এর আগেই তারা মারা যায়। হামলার দিন জঙ্গিদের অন্যরা বাইরে যে অবস্থান নিয়েছিলো তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এই তথ্য জানা গেছে আটক জঙ্গিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এছাড়াও হলি আর্টিজানের জঙ্গিদের পরিকল্পনায় ছিলো তারা দুটি অভিযান সফল করে এরপর সামনের কোনো রাস্তা ব্যবহার করবে না। লেকভিউ ক্লিনিকে চলে যাবে সেখানে গিয়ে তারা তাদের পোশাক পরিবর্তন করবে। ওই পোশাক পরিবর্তন করে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাবে। যাতে করে তাদেরকে কেউ সন্দেহ করতে না পারে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গুলশানের ঘটনার দিন রাতে যদি হলি আর্টিজান, এর আশপাশের এলাকা, নরডেক ক্লাব, লেকভিউ ক্লিনিক ঘিরে ফেলা না হতো তাহলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতো। সেই সঙ্গে আরও প্রাণহানীও হতে পারতো।
গুলশান হামলার ঘটনায় জঙ্গি দমনে সরাসরি অভিযানে অংশ নিয়েছেন ও অভিযান পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন একটি সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের কূটনীতিক পাড়ায় হামলা হতে পারে এই খবর আগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া হয়েছিলো। তবে সেখানে কোনো দিনক্ষণ ও কোথায় হবে সেই ব্যাপারে বলা ছিলো না। কিন্তু জনসমাগম হয় এমন স্থানে হবে তা বলা হয়েছিলো। সেই অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চেকপোস্ট বসানো, সিটি টিভি লাগানো, যান চলাচলে কড়াকড়ি করা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হয়নি। হলি আর্টিজানের ঘটনা ঘটেছে। ওই সূত্র জানায়, গুলশানের ঘটনা হয়তো ঠেকানো যেতো যদি সেখানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ফাঁক না থাকতো। কিন্তু ঘটনা ঘটার পর বোঝা গেছে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওই এলাকায় হামলা ঠেকাতে যে পদক্ষেপ নেয় তা আরও নিñিদ্র হওয়া দরকার ছিলো।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রাতেই গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে ধরা পড়ে যে তারা হলি আর্টিজানের পর নরডেক ক্লাবে হামলা চালাবে। এরপর লেকভিউ দিয়ে পালিয়ে যাবে সাধারণ মানুষের মতো। পায়ের কেডস ও গায়ের টিশার্ট চেঞ্জ করে ফেলবে। আর সেখানে বাঁধা প্রাপ্ত হলে সেখানেও হামলা করবে। প্রয়োজনে রোগীদের জিম্মি করবে। নরডেক ক্লাব হলি আর্টিজানের কাছাকাছি হওয়াতেই তারা একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্য ঠিক করে হামলা করে। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলার পর অন্যদের সঙ্গে নরডেকের ও লেকভিউর জন্য অন্য টিম থাকতে পারে ও ওই টিমে যে সদস্যরা ছিলো তারা কেমন করে পালিয়ে গেছে তাও বের করার চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানায়, গুলশানের ঘটনার পর জঙ্গিরা তাদের পাঁচজন জঙ্গিকে হারিয়ে সব পরিকল্পনা গুটিয়ে নিয়েছে এমন মনে করার কোনো সুযোগ নেই। তারা ফের হামলা করতে পারে। সেই ধরনের পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। এখন চেষ্টা চলছে তারা কোন জায়গায় হামলা করতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করে বের করা। সেই ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জঙ্গিরা আর্টিজানে যে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেছে ওই সব অস্ত্রের সংখ্যা বেশি না। আকারেও বড় না। তাছাড়া ধারালো অস্ত্রগুলো তারা সাধারণ ব্যাগে করে নিয়ে গেছে। আর ছোটগুলোতো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাগেই বহন করা সম্ভব। তাছাড়া জঙ্গিরাতো একই দিনে সব অস্ত্র গুলশানে নিয়ে যায়নি, হয়তো ধীরে ধীরে নিয়েছে। ঘটনার দিন এক সঙ্গে বহন করেছে কিনা এটাও নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। হলি আর্টিজানের ভেতরে অস্ত্র আগে থেকে রেখে এসেছিলো কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্র জানায়, গুলশানের ঘটনাই শুরু ও শেষ এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে দেশের সকল সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম