চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় গুলি আরও ২ জনের সাক্ষ্য
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে ২৮ বছর আগে শেখ হাসিনার সমাবেশে পুলিশের গুলির মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন এক সাংবাদিকসহ দুজন।
চট্টগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন এবং সেই ঘটনায় নিহত অজিত সরকারের স্ত্রী শেফালী সরকার রোববার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন জানান।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের আদালত ভবনে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে আসা নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ গুলি চালালে ২৪ জন নিহত হন।
ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে অঞ্জন সেন আদালতে বলেন, সে সময় তিনি স্থানীয় দৈনিক পূর্বকোণে কাজ করেন। সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনিসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক সেদিন আগ্রাবাদ এলাকায় শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকে উঠেন।
নিউ মার্কেট এলাকায় ট্রাক থেকে নেমে তারা আগে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরনো ভবনের সামনে অবস্থান নেন জানিয়ে অঞ্জন সেন বলেন, সেখান থেকে তারা পুলিশের লাঠিপেটা ও গুলি করার দৃশ্য দেখে ব্যাংকের সামনে একটি নালায় নেমে আশ্রয় নেন।
আইনজীবী মেজবাহ বলেন, সাংবাদিক অঞ্জন সেন আদালতে বলেছেন, আইনজীবীরা নেত্রীকে কর্ডন করে আদালত ভবনে নিয়ে গিয়েছিল সেদিন। কেন গুলি করা হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদার নির্দেশে গুলি ছোড়ার কথা জানিয়েছিলেন বলে আদালতে বলেছেন তিনি।
অঞ্জন সেন তার সাক্ষ্যে বলেন, ঘটনাটির তথ্য সংগ্রহ করে তিনি অফিসে গিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন জমা দিয়ে জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানে অনেকের লাশ দেখতে পান। এরপর বলুয়ারদিঘি মহাশ্মশানে গিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলার দৃশ্যও দেখেন।
তবে শেষ পর্যন্ত সেদিনের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ করা যায়নি জানিয়ে এই সাংবাদিক বলেন, অফিসে পুলিশ গিয়ে রিপোর্ট ও ছবিগুলো নিয়ে এসেছিল।
অঞ্জন সেন ছাড়াও সেদিন নিহত অজিত সরকারের স্ত্রী শেফালী সরকার এদিন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
অজিত সরকার ছাড়া সেদিন নিহত অন্যরা হলেনÑ হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে তখনকার পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৮ সালের ১৪ মে সহকারী পুলিশ কমিশনার হাফিজ উদ্দিন দেওয়ান ৪৭ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন।
ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর আদালত সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলে ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার কাদের খান সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
অভিযোগপত্রে মীর্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক গোবিন্দ চন্দ্র ম-ল ওরফে জেসি ম-ল, কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মমতাজ উদ্দিন, শাহ মো. আব্দুল্লাহ, বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামি কনস্টেবল বশির উদ্দিন, বাদী অ্যাডভোকেট শহীদুল হুদা এবং শেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার কাদের খান ইতোমধ্যে মারা গেছেন। অন্যতম আসামি কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক জেসি ম-ল দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন জানান, তিন মাস আগে মামলাটি বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর হয়ে এলে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ, ড. অনুপম সেনসহ ছয়জনের নামে সমন জারি করে আদালত।
এর ধারাবাহিকতায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অনুপম সেন গত ২৬ মে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। আর গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন সাক্ষ্য দেন ২৬ জুন।