নিহত জঙ্গিদের লাশ গ্রহণে স্বজনদের তাগিদ নেই
রিকু আমির : গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও সশস্ত্রবাহিনী পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত পাঁচ জঙ্গি ও কল্যাণপুরের তাজ মঞ্জিলে পুলিশ পরিচালিত অপারেশন স্টর্ম-২৬-এ নিহত নয় জনের মৃতদেহ গ্রহণের জন্য স্বজনদের মধ্যে তাগিদ নেই।
গুলশানের ঘটনায় নিহতদের লাশ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ও কল্যাণপুরের ঘটনায় নিহতদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত জঙ্গি আবীরের লাশ দাফন করা হয়েছে পুলিশের তত্ত্বাবধানে। মারা যাওয়ার পাঁচ দিন পার হলেও পরিবারের কেউই লাশ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ না করায় ১২ জুলাই সরকারি গোরস্থানে শুধু ইমামের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে লাশ দাফন করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, স্বজনদের পক্ষ থেকে লাশ গ্রহণে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ লাশ নিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট স্বজন ও লাশের ডিএনএ টেস্ট করে নিশ্চিত হয়েই হস্তান্তর করা হবে। তাছাড়া ঘটনা তদন্তে আরও কাজ রয়েছে, যেখানে এসব লাশ দরকার পড়বে। এ প্রয়োজন না ফুরানো পর্যন্ত লাশ হস্তান্তরের সুযোগ নেই।
১ জুলাই রাতে গুলশানে হামলার পরদিন পাঁচ জঙ্গির লাশসহ দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিকের লাশ উদ্ধার করেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। ময়নাতদন্তের জন্য সেদিনই লাশ নেওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে। পরে নিহত পাঁচ জঙ্গির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু সন্তানের অপকর্মে লজ্জিত হয়ে তাদের বাবা-মা লাশ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এ কারণে ঘটনার এক মাস কেটে গেলেও লাশগুলো এখনো পড়ে আছে সিএমএইচের মর্গে। সেখানে যে পাঁচ জঙ্গির লাশ রাখা হয়েছে তারা হলেন- রোহান, নিবরাস, মোবাশ্বির, খায়রুল ও শফিকুল। এ ছাড়া হলি আর্টিজানের বাবুর্চি বলে পরিচিত সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশও সিএমএইচে রয়েছে। ৫ জুলাই সেখানে তাদের প্রত্যেকের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। জঙ্গিরা ঘটনার আগে নেশাজাতীয় কোনো ওষুধ সেবন করেছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত হতে নিহতদের রক্ত ও চুলের নমুনা চেয়ে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। এ জন্যে ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সিএমএইচে যায় এবং সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এফবিআইর কাছে হন্তান্তর করে।
অন্যদিকে, কল্যাণপুরের ঘটনায় নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে গতকাল বুধবার। সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী অজ্ঞাত লাশের তালিকা অনুসারে নিহত জঙ্গিদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এর পরই সেগুলোর নমুনা কেমিক্যাল অ্যানালাইসিসের জন্য সিআইডিতে ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে পাঠায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। ইতোমধ্যে নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তারা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেজাত রউফ অর্ক, নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন, ধানমন্ডির তাজ-উল-হক রাশিক, গুলশানের আকিফুজ্জামান খান, দিনাজপুরের আবদুল্লাহ, পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম, সাতক্ষীরার মতিয়ার রহমান ও রংপুরের রায়হান কবির। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম