তারেক রহমানের ব্যাপারে আবারও ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে সরকার
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যাপারে ইন্টারপোলের কাছে আবারও সহায়তা চাইবে সরকার। পুলিশের মাধ্যমে এই সহায়তা চাওয়া হবে। তাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে সরকার রায় কার্যকর করতে চাইছে। এই জন্য সরকার অপেক্ষা করছে কবে নাগাদ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হবে। ওই রায় প্রকাশ হলে এর আগে তারেক রহমানকে যে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছিল ওই আদালতের কাছে উচ্চ আদালত থেকে রায়ের কপি পাঠানো হবে। রায়ের কপির ভিত্তিতে ওই আদালত রায় কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন ওই রায় কার্যকর করার জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় উচ্চ আদালত প্রকাশ করার পাশাপাশি তা নিম্ন আদালতের সংশ্লিষ্ট আদালতেও পাঠাবে। আদালত সাজা কার্যকর করার জন্য পরোয়ানা ইস্যু করবে। সেই পরোয়ানা পাঠানো হবে ডিসি ও এসপির কাছে। তারা ওই রায়ের কপি পাওয়ার পর এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন। তবে তারেক রহমান যেহেতু বিদেশে রয়েছেন এই জন্য আমাদেরকে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আদালত সাজা পরোয়ানা ইস্যু করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালত সাত বছরের কারাদ-, ২০ কোটি টাকা জরিমানা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে আদেশ দিয়েছে। আদালতের ওই আদেশ কার্যকর করার জন্য আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। তবে আমরাও কিছু কাজ করবো। কারণ তিনি এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বিদেশ থকে এখনই ফিরবেন না বলে তার আইনজীবীরা বলেছেন। সেই হিসাবে আমরা তার না আসার বিষয়টি মাথায় রেখেই রায় কার্যকর করার জন্য ব্যবস্থা নেব।
রায় কার্যকর করার ব্যবস্থা নিলেই তিনি আসবেন এমন মনে করার কোনো কারণ আছে ? আইনমন্ত্রী বলেন, না তেমন কোনো কারণ নেই। তিনি আসবেন না। আসতে চাইবেন না সেটাই মনে করছি। কারণ তিনিতো পলাতক। একজন পলাতক ব্যক্তিকে আদালত সাজা দিয়েছে তা জানানোর পর চলে আসবেন এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। তারেক রহমানও আসবেন না। আমরা চেষ্টা করছি তাকে ফেরত আনার। এর আগেও তিনি আসেননি। এখন যে আসবেন সেটা মনে করা যাবে না। ইন্টারপোলের কাছে এর আগে তথ্য দেওয়া হয়েছিল সেই তথ্যের প্রেক্ষিতে তার নাম ইন্টারপোলের তালিকায় প্রকাশ করে রেড নোটিস জারি করে। এরপর তারেক রহমানের তরফ থেকে নানা ধরনের তথ্য দিয়ে সেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয় বলেও তথ্য দেওয়ান। পরে ইন্টারপোলের তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।এরপর আমরাও অপেক্ষা করি তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে তা প্রমাণের জন্য।
আইনমন্ত্রী বলেন, এখন তাকে শাস্তি দিয়েছে আদালত, জরিমানাও করেছে, পরোয়ানাও জারি করার আদেশ দিয়েছে। সেই হিসাবে আইনী সব প্রক্রিয়াসম্পন্ন করে এই ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তার বিরুদ্ধে দুদক যে মিথ্যে অভিযোগ করেনি ও সরকার যে সব অভিযোগ করেছে তাও যে সত্যি সেটাও প্রমাণ হয়েছে। এই অবস্থায় পুরো বিষয়টি ইন্টারপোলের কাছে জানানো হবে। তাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, বিএনপির নেতারা আগে বলেছেন, দুদকের অভিযোগ মিথ্যে। কিন্তু এখন তারা কি বলবেন? যদিও তারা রাজনৈতিকভাবে বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু এই সব বক্তৃতা কাজে আসবে না। আইনের দৃষ্টিতে তিনি অপরাধ করেছেন। এতদিন ক্লিন ইমেজ গড়ে তোলার তাদের চেষ্টা, সেই চেষ্টাতো ব্যর্থ হয়েছে।
তারেক রহমানের আইনজীবীদের একজন অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকার ও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু ইন্টারপোল জানে যে এই মামলা রাজনৈতিক। তারেক রহমান ন্যায় বিচার পাননি। সরকার প্রভাব খাটিয়ে তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে। তারেক রহমানকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর আগে আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। আমরা তেমনটাই আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি। কেন হয়নি কি কারণে তার বিরুদ্ধে এমন রায় হয়েছে এগুলো ইন্টারপোল ও যুক্তরাজ্য সরকার জানে। তারা এই ব্যাপারে সরকারকে সহায়তা করবে না। সরকার তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে সফল হবেন এটা মনে করতে পারেন কিন্তু লাভ হবে না। তিনি তার সুবিধামতো সময়ে পদশে ফিরবেন। আর ফিরে এসে আপিল করবেন। সরকার আপিল করার সুযোগ নেই বলে যত কথাই বলুক না কেন প্রকৃতপক্ষে সুযোগ আছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম