মুক্তিযোদ্ধার ছেলে জঙ্গি রাশিক পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো
মাসুদ আলম : ঘড় ছাড়ার পর অন্য জঙ্গিরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও কল্যাণপুরে নিহত তাজ-উল-হক রাশিকের ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। চাকরির কথা বলে গত ৬ এপ্রিল বাসা থেকে বের হয় রাশিক। তারপর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। আর এ কারণেই তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়নি। রাশিকের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে নারাজ পরিবারের সদস্যরা। তার বাবা রবিউল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। রাশিকের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, ধানমন্ডির ১১/এ নম্বর রোডের ৭২ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতো রাশিক। ৬ এপ্রিল বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর বাসায় ফিরেনি রাশিক। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখতেন পরিবারের সঙ্গে। খোঁজ নিতেন অসুস্থ বাবা মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলামের। ১৯৭১ সালে ঢাকা সেক্টর ২ এর অধীনে যুদ্ধ করেছেন তিনি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর স্ত্রী জাহানারা বেগমকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ওখানেই ১৯৯০ সালে রাশিকের জন্ম হয়। এর চার বছর আগে জন্ম হয় রাশিকের ভাই রাজিবের। জন্মগত সূত্রেই রাশিক আমেরিকান নাগরিক। তবে বাবা রবিউল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারটি চলে আসে দেশে। পরে ‘ও’ লেভেল শেষ করেছেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টার মাইন্ড থেকে। এরপর ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল ই) বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর চার মাস বাসাতেই ছিলেন। নামাজ কালাম পড়তেন, আর পরিবারের সাথে সময় কাটাতেন। সবাই তাকে অত্যন্ত ভদ্র ছেলে বলেই জানতো। এই ছেলেটি কীভাবে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে গেল সেটা কেউ কল্পনাই করতে পারছেন না। রাশিক যা করেছে, সেটা অবশ্যই ভুল। তবে যারা তাকে এই পথে নিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি করেন রাশিকের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে রাশিকের মৃতদেহ নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। এ বিষয়ে ধানম-ি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন জানান, রাশিক নিখোঁজের বিষয়টি তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের জানায়নি। তবে রাশিকের পরিবারকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করিনি। যেহেতু বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছে। গত ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এসময় সোয়াতের সঙ্গে গোলাগুলিতে ৯ ‘জঙ্গি’ নিহত হয়। নিহতদের একজন তাজ-উল-হক রাশিক। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি