নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা বিএনপি মনে করছে দৃষ্টি ফেরানোর কৌশল
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে বলেছেন। এলাকায় গিয়ে কাজও করার নির্দেশ দিয়েছেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ও সরকারের কর্মকা-ের ব্যাপারেও জনগণকে জানাতে বলেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনায় আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি এখনই উৎসাহবোধ করছে না। কারণ, বিএনপি মনে করছে, এটা প্রধানমন্ত্রী করেছেন ইচ্ছে করেই। দেশে সাম্প্রতিককালে জঙ্গিদের হামলা, বিদেশি হত্যা, সরকারের ব্যর্থতা, কূটনীতিকপাড়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারা, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা ও দেশে অগতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতাসীন থাকলে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে বলে যে সমালোচনা হচ্ছে, তা থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশিদেরও তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জঙ্গি হামলার পর এ ধরনের ঘোষণা না দিলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারের উপর সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করার ব্যাপারে চাপ আসবে। সেটা সামলানো কঠিন হতে পারে। এছাড়াও জনগণের দিক থেকেও চাপ আসতে পারে। আন্তর্জাতিক মহল ও জনগণের এ উপলব্ধিকে আমলে নিয়ে সরকারপ্রধান হঠাৎ করেই নির্বাচনের জন্য তার এমপিদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের এলাকায়ও যেতে বলেছেন।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ধারক বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। বলেছেন, তার কাছে খবর রয়েছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও সবদলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে পরাজিত হবে, এজন্য সরকার কোনোমতে আগাম নির্বাচন দিতে চাইছে না। বরং সরকার নির্বাচনের কথা বলে এখন যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেই অবস্থা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চাইছে। কিন্তু সরকারপ্রধানের এ কৌশলে পাল্টাকৌশল ঠিক করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের কাছে বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেই যেতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি কথা বলার পর খালেদা জিয়াও তারেক রহমানকে বলেছেন, নির্বাচনের কাজ তো আমরা এগিয়ে রেখেছি। সরকার যেকোনো দিন নির্বাচন দিলেই বিএনপি নির্বাচন করবে। তবে শর্ত নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। মাঠ প্রশাসনকে নিরেপক্ষ করতে হবে। এই নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিলেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে এমন নয়। আগে আলোচনা, এরপর নির্বাচন।
বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, তারা যতই নির্বাচনের কথা বলুক না কেন, জনগণের মতামতের কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। তারা নির্বাচন করতে চাইছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। সেই হিসাবে বিএনপির সঙ্গে তারা কোনো আলোচনা করতে চাইছে না। সরকারের ভয়, বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনকালীন সমঝোতা হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে, সেটা তারা কোনোভাবেই করবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। সরকার যে জোর করে ক্ষমতায় আছে সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। এই জন্য দেখা গেছে, একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। জনগণের মতমতকে তারা উপেক্ষা করছে। আমরা বারবার নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছি। সরকার কর্ণপাত করেনি। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতাসীন না থাকলে কী ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, সেই ধরনের আশঙ্কাও আমরা ঘোষণা করেছি। আমরা এখনো বলব, সরকার যদি এখনো আগাম নির্বাচন না দেয়, তাহলে দেশে হয়তো আরও অনেক ঘটনাই ঘটতে থাকবে। জঙ্গিবাদের উত্থানের ও তাদের সংগঠিত হওয়ার পথ তৈরি করেছে সরকার। সরকারপ্রধান তার সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কিন্তু সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনের কথা বলছে না। এতে বোঝা যায়, তারা আবারো হয়তো পাতানো নির্বাচন করতে চাইছে। এ ধরনের নির্বাচন আর দেশের মানুষ মেনে নেবে না। তাই সরকার ও প্রধানমন্ত্রী যদি সব দলের অংশগ্রহণে নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, সেটাই ভালো হবে দেশের জন্য।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি তো বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করছে না। কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য নির্বাচন চায়। নির্বাচন তো হয়েছে, তারা আসেনি। ওই সময়ে আসেনি। এখন তাদের জন্য কেন নির্বাচন করতে হবে? তাদের নির্বাচন করতে হলে নির্ধারিত সময় অপেক্ষা করতে হবে। আর ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে তাদের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। তা তো তারা পারেনি। সরকারের সমালোচনা করলে কোনো লাভ হবে না। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।