শুধু জাতীয় ঐক্যে জামায়াতকে দূরে রাখবে বিএনপি, নির্বাচন থেকে নয়
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী ও কিরণ সেখ : জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য গড়ার জন্য জাতীয় স্বার্থে জামায়াতকে দূরে রাখতে রাজি বিএনপি। কারণ জামায়াতের তরফ থেকেই বলা হয়েছে- যদি সরকারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার নেই বলে যেসব জঙ্গিবাদী কর্মকা- হচ্ছে সেসব ঠেকানোর জন্য বিএনপি জাতীয় ঐক্য গড়ে তাহলে জামায়াত স্বেচ্ছায় দূরে থাকবে। কারণ সরকারের অভিযোগ- জামায়াত জঙ্গিবাদী কর্মকা- করছে। এই অভিযোগের কারণে তারা জাতীয় ঐক্যের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে থাকার খুব বেশি অনড় অবস্থানে নেই। কারণ জামায়াতের কাছে এখন জাতীয় ঐক্যই বড় ইস্যু। বিএনপি সেই ঐক্য করবে এটাই মনে করছে তারা। সেজন্য নিজেরা দূরে থাকতে চাইছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জামায়াতকে দূরে সরিয়ে রাখার কিংবা জমায়াত ছাড়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। কারণ আগামীতে জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তবে জামায়াতকে সরকার নিষিদ্ধ করলে তখন বিকল্প কৌশলও ঠিক করে রেখেছে দলটি। কোনোভাবেই সরকার যাতে জামায়াতের ভোট নিতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেছেন, জামায়াত ছাড়বে বিএনপি- এ ধরনের আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেননি ম্যাডাম। তাছাড়া জামায়াতকে নিয়ে তো বিএনপি সব কর্মসূচি করছে না। সরকার ভুলে যাচ্ছে- বিএনপি একটি দল, জামায়াতও একটি দল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে ২০টি দল রয়েছে। এর মধ্যে জামায়াত একটি। জোটের ২০ দলের আলাদা আলাদা এজেন্ডা রয়েছে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। তেমনি জামায়াতেরও রয়েছে। জামায়াত তাদের মতো করে কাজ করে এবং দল পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে তারা বিএনপির কাছ থেকে পরামর্শ নেয় না। বিএনপিও পরামর্শ নিতে যায় না। এখন সবাই মনে করে বিএনপি ও জামায়াত এক। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট কেবল নির্বাচনি জোট। এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনি জোটের সঙ্গে দলের কর্মকা- সম্পৃক্ত নয়। নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি ও জামায়াত একসঙ্গে কাজ করবে।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি জামায়াত নির্বাচনি জোট। এজন্য নির্বাচনের সময়ে একসঙ্গে কাজ করা হবে। এর বাইরে বিএনপির যত কর্মসূচি তা বিএনপি আলাদাভাবেই করছে। বিএনপি ও জামায়াত এক জোটে থাকার কারণে সবাই বিষয়টা এক করে ফেলে। এতে একটা ঝামেলা তৈরি হয়। আসলে বিষয়টি তো তা নয়। বিষয়টি হলো- জামায়াত কখন কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার। জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকার ও বিভিন্ন মহল থেকে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে আন্তর্জাতিক মহল বার বার জামায়াত ছাড়ার কথা বলেছে। এখনো চাপ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- বিএনপি জামায়াতকে জোট থেকে সরিয়ে দিলেই সরকারি জোট তাদের নিয়ে নেবে। কারণ জামায়াতের যেসব নেতার বিরুদ্ধে আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ছিল সেসব নেতাদের বিচার প্রায় শেষ। মীর কাসেমের রিভিউ আপিল শুনানির জন্য রয়েছে। শীর্ষ জামায়াত নেতাদের বিচার শেষ। এই অবস্থায় যারা জামায়াতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। সেই হিসাবে জামায়াতের দোষারোপ করা যাবে না। আর যদি যায় তাহলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে, সেটাই করুক। তাই বলে বিএনপিকে কেন জামায়াত ছাড়তে হবে? বিএনপির জামায়াত ছাড়া না ছাড়ায় এখন খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তা আমি জানি না। আর এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণাও নেই। তবে খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, কিছু কিছু গণমাধ্যমে এসেছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, জামায়াত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। আসলে তিনি এ কথা বলেননি। আমি তার পাশেই বসে ছিলাম। আসলে উনার বক্তব্য ভিন্নভাবে প্রচার করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জামায়াতকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
সম্পাদনা : এএইচসি