৩ মাসের মধ্যে রায় হতে পারে বিচারের অপেক্ষায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার একযুগ
মাহমুদুল আলম : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের অপেক্ষার একযুগ অতিবাহিত হবে আগামীকাল শনিবার। রোববার এ অপেক্ষা ১৩তম বছরে পড়বে। তবুও কবে শেষ হতে পারে এ মামলার বিচারিকপ্রক্রিয়া, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের রয়েছে নানা বক্তব্য।
জানতে চাইলে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই এই মামলার বিচারিকপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। সরকারপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, এ মামলার রায় তিন মাসের মধ্যে দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আগামী মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই মামলার রায় হতে পারে বলে ইতোমধ্যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে আশা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। আর দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া বাকি আছে। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। এ বিষয়ে রেজাউর রহমান বলেন, এ মামলায় মোট ৫১১ জন সাক্ষী। এর মধ্যে ২২৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্য দেওয়া শেষ হয়েছে। বর্তমানে জেরা চলছে। এ পর্যায়ে গিয়ে মন্ত্রী এটা বলতেই পারেন।
বিএনপির বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ মামলায় আইনের দৃষ্টিতে পলাতক আসামি। তাই মামলার অন্য পলাতক আসামিদের মতো তার পক্ষেও আছে রাষ্ট্রনিয়োজিত আইনজীবী। বিচারিকপ্রক্রিয়া বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আবুল কালাম আক্তার হোসেন জানান, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী উপস্থাপন ও যুক্তিতর্ক পর্বের মাঝে আসামিপক্ষের সাক্ষী (সাফাই সাক্ষী) উপস্থাপনের একটি পর্ব থাকে। এক্ষেত্রে পলাতক আসামিদের সাফাই সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ খুব একটা থাকে না। তবে অন্য আসামিরা যদি সাফাই সাক্ষী হাজির করেন, তাতে আরও সময় লাগতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান কৌঁসুলি জানান, ২১ আগস্টের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদ-। তাই তারেক রহমানসহ কোন আসামির কী হবে, তা আদালতই ঠিক করবে। প্রধান কৌঁসুলিকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মো. আকরাম উদ্দিন। তিনি জানান, ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত বর্তমান আসামি ৫১ জন। এদের মধ্যে পলাতক ১৮, জামিনে ৮ ও আটক আছেন ২৫ জন।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। তিনিসহ এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৫২ জন, অর্থাৎ কারাগারে ২৬ জন।
২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হুজিনেতা মুফতি আবদুল হান্নান, সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
তাছাড়া মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আবদুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গ্রেনেডের স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী।
আসামিদের মধ্যে পলাতকরা হলেনÑ তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, মাওলানা তাজউদ্দিন (গ্রেনেড সরবরাহকারী, বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী), ঝিনাইদহের ইকবাল, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকার দোহারের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার। আর ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন।
জামিনে থাকা আট আসামি হলেনÑ পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, খোদা বকস চৌধুরী, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সী আতিকুর রহমান, আবদুর রশিদ, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক বিএনপি নেতা কাউন্সিলর আরিফুর রহমান।
কারাগারে থাকা ২৫ জন হলেনÑ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক আব্দুর রহিম, মাওলানা ফরিদ, মুফতি আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হুজির সাবেক আমির মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ বাট, জঙ্গি আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আবদুল মান্নান, মহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরিফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, আবদুস সালাম পিন্টু, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, উজ্জ্বল ওরফে রতন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক ও বরিশালের মাওলানা আবু বকর। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত