পদ পেয়েও অভিমানী নেতারা দেখা করছেন না খালেদা জিয়ার সঙ্গে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপির নবগঠিত কমিটির ৫০২ নেতার মধ্যে অনেকেই কাক্সিক্ষত পদ পাননি। তাই অভিমান করেছেন। ৬ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ওই সব অভিমানী নেতা একবারের জন্যও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেননি। খালেদা জিয়া না ডাকলে দেখা করতে যাবেন না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
বিএনপি কাক্সিক্ষত ও মনের মতো পদ পাননি এমন নেতাদের একাধিক সূত্র জানায়, পদ পাওয়ার পরও একাধিক নেতা সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে রাখেন। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। দেশে থেকেও মোবাইলফোন বন্ধ রাখেন। খালেদা জিয়ার কানেও এই কথা গেছে। আর তা জানলেও তিনি এখনও কোনো নেতাকে ডাকেননি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একজন নেতাকে খালেদা জিয়া এবার আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাকে স্থায়ী কমিটির পদ দেওয়া হবে। সেই হিসেবে তিনি আশায়ও ছিলেন। এতদিন ধরে একটি জেলার সভাপতির পদ থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। এবার ওই উপদেষ্টার পদ থেকে স্থায়ী কমিটির পদ পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু কমিটিতে তাকে এবারও স্থায়ী কমিটির পদে রাখা হয়নি।
ওই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিএনপিতে কথা দিয়ে কথা রাখা হয় না। গতবারও আমাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করার জন্য নিয়শ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। গতবার দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল ধৈর্য্য ধরতে। সেই হিসেবে ৯ বছর ধৈর্য ধরেছিলাম। কিন্তু এবারও স্থায়ী কমিটির নাম দেখার একদিন আগে নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর দেখা গেলেও স্থায়ী কমিটিতে নাম নেই।
বিএনপিতে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন এমন এক নেতা বলেন, যারা স্থায়ী কমিটির পদে থেকেও যথাযথভাবে কাজ করছেন না তারা আবারও স্থায়ী কমিটির পদ পেলেন। আমরা কী করবো। আমাদেরকে এইভাবে বারবার অবহেলা করা হয়েছে।
বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় হতাশ। তার ধারণা ছিল- স্থায়ী কমিটির ১৯ নম্বর হলেও তার নাম থাকবে, কিন্তু তা নেই। ফলে তিনি হতাশ। ওই নেতা বলেন, ঘটনার পর সাতদিন মোবাইলফোন বন্ধ করে সব যোগাযোগ বন্ধ করে চিন্তা করেছি- কী করবো? পরে ঠিক করেছি দল আপাতত ত্যাগ করা যাচ্ছে না। তাই দলে থাকতে হবে। এজন্য আগের মতো করে নয়, নিজের সুবিধা মতো করে থাকবো। আগে কেন্দ্র থেকে কিংবা ম্যাডাম বলার আগেই নিজে থেকে অনেক কাজ করতাম। কিন্তু এখন নিজের সুবিধামতো কাজ করছি। এইভাবেও বিএনপিতে থাকলে সমস্যা নেই। তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন কথা না রাখার কারণে তার সঙ্গে দেখা করিনি। কথাও বলিনি। তিনি না ডাকা পর্যন্ত তার কাছে যাবো না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি ডাকলে যাবো, না ডাকলে যাবো না। আবার ডাকলেও একবার যাওয়ার পর নিয়মিত যাবো এমন হবে না। একবার ডাকার পর আবার যতদিন না ডাকবেন ততদিন আর যাবো না। কারণ তার কাছে বারবার গেলেও আবার যেভাবে মূল্যায়ন করবেন না গেলেও একইভাবে মূল্যায়ন করবেন। তাহলে এত কষ্ট করার দরকার কী!।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নেতারা পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ এটা আমরা বিভিন্ন গণমঅধ্যমে দেখছি। এগুলো অনেকটাই মিডিয়ার সৃষ্টি। আসলে এগুলো ঠিক না। দলের ভেতরে কোনো ক্ষোভ আছে বলে আমি মনে করছি না। নেতাদের যোগ্যতা ও অবস্থান মূল্যায়ন করেই ম্যাডাম দায়িত্ব দিয়েছেন। যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই দায়িত্ব যাতে তারা যথাযথভাবে পালন করেন সেটা মাথায় রাখতে হবে এবং কাজ করতে হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম