সজীব ওয়াজেদ জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা
মিল্টন বিশ্বাস
২০ সেপ্টেম্বর (২০১৬) ‘ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ফর আইসিটি’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নে অসামান্য অবদান ও প্রতিযোগিতামূলক টেকসই উন্নয়নের একটি হাতিয়ার হিসেবে আইসিটির প্রতি অঙ্গীকার ও অসাধারণ নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ জয়কে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এলে জয়ের প্রযুক্তিবিষয়ক নিজস্ব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বিশ্বের সড়কে চলতে উৎসাহ দেয়। সে সময় থেকে তিনি শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েই শেখ হাসিনা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের প্রশাসনকে গতিশীল করাসহ আইটি সেক্টর উন্নয়নে কম্পিউটারের ব্যাপক প্রচলন ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীকে প্রযুক্তি বিষয়ে নিরন্তর প্রাণিত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এজন্য তিনি বলেছেন (২০ সেপ্টেম্বর), ‘জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি। এজন্য সে আমার শিক্ষক। শুধু তাই নয়, তথ্যপ্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র মেহনতি মানুষ থেকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার মন্ত্র এসেছে জয়ের কাছ থেকে। এমন সন্তানের মা হতে পেরে আমি গর্বিত।’
আসলে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উদ্দীপিত মুহূর্ত যাপন করছি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র বদৌলতে বিস্তৃত পরিসরে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ আমাদের যোগাযোগ ও শিক্ষার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ মানুষ যোগাযোগ ও শিক্ষার শক্তিশালী এবং উপযোগী মাধ্যম মনে করলেও কোনো কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগে অতি উৎসাহী বিশেষত অপরাধ ও সন্ত্রাসের উদ্দেশ্যে। যদিও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইন পাস হয়েছে, রয়েছে সাইবার এথিকস। নিরাপদ ও দায়িত্বের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারকে ‘সাইবার এথিকস’ বলে। অনলাইনের ক্ষতিকর ও বেআইনি ব্যবহার থেকে কীভাবে নিজেদের এবং অন্যকে রক্ষা করা যায় এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে এতে। নিরাপদ ও দায়িত্বের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং অপব্যবহার সম্পর্কে তরুণ সমাজকে সচেতন করে তোলাকেও এর আওতা বলে মনে করা হয়। ই-মেইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জানতে হবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের নীতিমালা। পিতামাতা-শিক্ষকরা এ বিষয়ে সচেতন করতে পারেন অন্যদের। মূলত তথ্যপ্রযুক্তির অবারিত প্রবাহের সুযোগে ভালো কাজের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জঙ্গিবাদের প্রসারে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। জঙ্গি সংগঠনগুলো যোগাযোগ ও অর্থ সংগ্রহ করে থাকে নেট ব্যবহার করে। অবশ্য সরকারের আইনি ব্যবস্থাও সক্রিয় এসব অপরাধ প্রতিরোধে। প্রধানমন্ত্রী ও তার পুত্র জয়ের মতো ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র স্বপ্নদ্রষ্টার বিরুদ্ধেও সাইবারে অপপ্রচার চলছে। কখনো কখনো তাদের উভয়কে হত্যার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এ কোন দেশের অধিবাসী আমরা, যেখানে মানুষের কল্যাণ কামনায় রাতদিন সরকারকে ব্যস্ত থাকতে হয়, সেখানে এ ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয় কেন? প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু নোংরামি কোনোমতে মেনে নেওয়া যায় না।
দুই. সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রচেষ্টায় ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলতে বোঝায়, দেশের সকল নাগরিককে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারার সক্ষমতা তৈরি করা। উপরন্তু তার চারপাশে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা যাতে তার জীবনধারাটি যন্ত্র-প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশের অনন্য নিদর্শন হিসেবে প্রতিভাত হয়। ইতোমধ্যে শিক্ষাসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা ও সেবাকে ডিজিটাল করা হচ্ছে। এতে দেশের মানুষের জীবনধারা ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করেছে। তবে মনে রাখতে হবে, আমাদের কৃষিভিত্তিক সমাজের সাংস্কৃতিক মানকে ডিজিটাল যুগের স্তরে উন্নীত করা একটি কঠিন কাজ। তার জন্য সঠিক নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দরকার। জয়ের দিক-নির্দেশনায় শেখ হাসিনা সেই কাজটি সুনিপুণ পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করে চলেছেন। মনে রাখতে হবে, এদেশে আমরা সর্বপ্রথম শেখ হাসিনার মুখেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির কথা শুনেছি। তার নেতৃত্বেই সম্পন্ন হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপান্তরের ইতিহাস।
বাংলাদেশের অগ্রগতির ইতিহাস এখন সমৃদ্ধ। দেশের প্রতিটি সূচকে এগিয়ে আছি আমরা। শেখ হাসিনার সরকারের তৃতীয় মেয়াদের এই মুহূর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছিÑ বর্তমান নেতৃত্বাধীন সরকারের সাড়ে ৭ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপি বেড়েছে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৬৪.৫ থেকে ৭০ হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের সব সূচকেই উন্নতি হয়েছে। উন্নতি হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তার। ব্যাপকভাবে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ৪৫৮৩ মেগাওয়াট থেকে সেটি ১৩,২৮৩ মেগাওয়াট হয়েছে। অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশটা হয়েছে ব্যাপকভাবে। মোবাইলের ব্যবহারকারী দ্বিগুণ হওয়া, ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী ১২ লাখ থেকে সোয়া চার কোটি হওয়াসহ সকল খাতেই আমাদের সম্মুখগতি দৃশ্যমান। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এ রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানদের মধ্যে আর কেউ ডিজিটাল রূপান্তর বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে তত্ত্বীয় বা প্রায়োগিক কোনো কাজ করেননি। সকল দেশেই মহান নেতারা দেশের অগ্রগতিকে সামনে নিয়ে যান। শেখ হাসিনা আমাদের সেই রাষ্ট্রনায়ক। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ হতে চলেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন এদেশের স্বাধীনতার রূপকার, তেমনি ‘আধুনিক’ ‘ডিজিটাল’ ‘জ্ঞানভিত্তিক’ বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতেই গড়ে উঠেছে। এ বিষয়ে তার অবদান সকল বিতর্কের উর্ধ্বে।
তিন. আওয়ামী লীগ সরকার সব নাগরিকের জন্য ‘প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার পথে অনেক দূর এগিয়েছে। গ্রামের স্কুলের ডিজিটাল ক্লাসরুম থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকায় বসে সরকারি তথ্য জানার অসাধারণ সব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার বদৌলতে।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান