নববর্ষের কর্মপরিকল্পনা
আমিন ইকবাল
আমাদের জীবনে নববর্ষ আসে। বাংলা নববর্ষ আমাদের নিজস্ব। ইংরেজিটা পশ্চিমাদের। দুটোর সঙ্গেই বাঙালি জাতি সমান পরিচিত। মুসলিম হিসাবে আরবি নববর্ষও আমরা জেনে থাকি। নববর্ষ মানেই নতুন ভাবনা, নতুন স্বপ্ন। বুদ্ধিমানরা নববর্ষকে স্বাগত জানায় নতুন স্বপ্নের প্রত্যাশায়। নিজেকে নতুন করে উপস্থাপনের কামনা থাকে নববর্ষের প্রথম প্রহরে। তবে, নতুন বছরের স্বপ্নপূরণে প্রয়োজন বিগত বছরের সঠিক মূল্যায়ন। তাই, আগামীর ভাবনা আর ভবিষ্যত পরিকল্পনার সঙ্গে ফিরে তাকাতে হবে ফেলে আসা দিনগুলোর দিকেও। হিসাব-নিকাশে বসতে হবে অতীতজীবনের ডায়েরি খুলে। জীবনের ডায়েরিতে ধরা পড়বে অসংখ্য ভুল। প্রভুর দরবারে সেসব ভুলের ক্ষমা প্রার্থনা করা নববর্ষের প্রথম কাজ।
প্রতিটি নববর্ষের বিদায়ি মুহূর্তে আগামীর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। বিদায়ি বছর কী কী ব্যর্থতা ছিল, নতুন বছরে এইসব ব্যর্থতা কীভাবে দূর করা যায়, নতুন বছর ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য কী করতে পারি, প্রতিটি সময় সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবো কিনা, একজন মুসলিম ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে প্রতিটি মুহূর্ত আমার কাছে কী দাবী রাখেÑ এসব নিয়ে পরিকল্পনায় বসা নববর্ষের দ্বিতীয় কাজ।
ইসলাম বলেÑ প্রতিটি ভালো কাজের নিয়ত করা জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা সফলতার পথ দেখায়; খাঁটি নিয়ত কাজের গতি বৃদ্ধি করে। কাজের শুরুতে নিয়তের গুরুত্ব দিয়েছেন রাসুল সা.। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয় প্রতিটি কাজ নিয়তের ওপর নিরভর্শীল।’ [বুখারি : ১/১] অন্য হাদিসে আছে ‘মুমিন বান্দার নিয়ত তার কর্মের চেয়ে উত্তম।’ [বাইহাকি : ১/৮] তাই, নববর্ষে আমাদের নিয়ত ঠিক করতে হবে। পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কাজের গতি বৃদ্ধি এবং সঠিকতার জন্য প্রয়োজনে বড়দের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। তাদের সঙ্গে নিজের চিন্তা শেয়ার করে ভালোটা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেব নববর্ষে।
সময় জীবনের অমূল্য সম্পদ। সময়কে হেলায়-ফেলায় কাটিয়ে দিলে পরজগতে আক্ষেপের সীমা থাকবে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সেখানে তারা (অপরাধীরা) চিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের আবার দুনিয়ায় প্রেরণ করুন। আগে যা করেছি, তা আর করব না। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এতটা সময় দিইনি, যাতে উপদেশ গ্রহণ করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীরাও আগমন করেছিল। অতএব, আজাব আস্বাদন করো। জালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ [সুরা ফাতির : ৩৭]। রাসুল সা. বলেন, ‘বুদ্ধিমান সে ব্যক্তি, যে নিজের জীবনের হিসাব নেয় এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করে।’ [মুস্তাদরাক]। ইবনে ওমর রা. বলতেন, ‘তুমি সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকার অপেক্ষা করো না এবং সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকাল পর্যন্ত জীবিত থাকার আশা করো না। আর সুস্থ থাকা অবস্থায় অসুস্থ সময়ের জন্য আমল করে নাও এবং জীবন থাকতে মৃত্যু-পরবর্তী সময়ের পুঁজি সংগ্রহ করো।’ [বুখারি]।
মহাকালের হিসাবে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সময় খুবই অল্প। দেখতে দেখতে চলে যায় দিন। এর মধ্যেই অনেক কিছু প্রস্তুত করতে হয়। যোগাড় করতে হয় পরজগতের পাথেয়। পৃথিবী হচ্ছে পরকালের শস্যক্ষেত। পরকালের ফসল ফলাবার জন্যই মহান প্রভু পৃথিবীতে আমাদের প্রেরণ করেছেন। যেদিন পৃথিবীতে পরকালের ফসল ফলানো যাবে না, সেদিন পৃথিবীরও কোনো মূল্য থাকবে না। অতএব, দু’দিনের দুনিয়ার চাকচিক্যের পেছনে না পড়ে, আমাদের মনযোগী হতে হবে পরকালের ফসল ফলানোর কাজে। দুনিয়াতে যা কিছু ফলাবোÑ পরকালে তাই আমার সম্বল হবে। অনন্তকালের সঙ্গী হবে।
প্রতি বছর নববর্ষকে কেন্দ্র করে আপত্তিকর অনেক কিছু হয়ে থাকে সমাজে। পহেলা বৈশাখ বা থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনের নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বখাটেরা। এমনটা আদৌ কাম্য নয়। এ থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের ধর্ম এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিকÑ এমন কিছু করা যাবে না নববর্ষ উদযাপনের নাম করে। প্রতিটি নববর্ষে আমাদের জীবন কল্যাণের প্রাচুর্যে ভরে উঠুক। শান্তিময় হয়ে উঠুক দেশ ও জাতি। মহান আল্লাহর রহমতে পূর্ণ হোক জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। সর্বক্ষেত্রে আল্লাহই আমাদের সহায়। তার কাছেই আমাদের সকল স্বপ্ন ও পরিকল্পনার মঙ্গলকামনা।