পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা
সুহাইল আহমাদ
বিয়ে-শাদীর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাত্র-পাত্রী নির্বাচন। দাম্পত্য জীবনের পরিধি যেমন অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত এর সমস্যাও তেমন খুবই বিস্তৃত, জটিল ও স্পর্শকাতর। এ জন্য বিয়ের পূর্বেই পাত্র-পাত্রী দেখে সকল দিক গভীরভাবে তলিয়ে দেখা জরুরী, যেন পরবর্তীতে এ সংক্রন্ত কোন সমস্যা দাম্পত্য জীবনকে দুর্বিষহ না করে তোলে। এ জন্য ইসলাম এর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে যথেষ্ট। সাহাবী আবু হুরায়রা রা. এর বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি মহানবীর সা. নিকট এসে বলল, আমি একজন আনসারী রমণীকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। এ কথা শুনে মহানবী সা. বললেন, মেয়েটিকে দেখে নাও। কেননা আনসারীদের চোখে আবার সমস্যা থাকে। [মুসলিম:১/৪৫৬]
উপরোক্ত হাদীসগুলোর ভাষ্য এক ও অভিন্ন। তা হচ্ছে বিয়ের পূর্বে বর কনেকে দেখে নেয়া। তো মেয়ে দেখার শরীআত সম্মত নিয়ম হলো দীনদারীকে প্রাধান্য দিয়ে আনুসাঙ্গিক সকল বিষয় প্রথমে দেখে নিবে। মনঃপুত হলে বিয়ের ইরাদা নিয়ে যথাসম্ভব গোপনীয়তা রক্ষা করে মেয়ের মুখ ও উভয় হাত দেখে নিবে। বর ছাড়া অন্য কোন পুরুষের কনে দেখা শরীআতে নিষিদ্ধ।
চাই সে বরের পিতা বা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হোক না কেন। তাদের কেউ বরের পক্ষ হয়ে কনে দেখলে কবীরা গুনাহ হবে। সুতরাং আমাদের দেশে বাবা, ভাই, বন্ধু-বান্ধব মিলে ঘটা করে মেয়ে দেখার যে প্রচলন চালু আছে তা শরীআতের দৃষ্টিতে নাজায়িজ ও হারাম। পুরুষ সদস্য বাদ দিয়ে শুধু নারী সদস্য নিয়েও ঘটা করে মেয়ে দেখা শরীআত সম্মত নয়। কেননা এভাবে ঘটা করে কনে দেখার পর যদি কোন কারণবশতঃ বিয়ে না হয়, তাহলে এটা ঐ মেয়ে পক্ষের জন্য রীতিমত বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী সময়ে অন্যরা মেয়ের ব্যাপারে নানা রকম সন্দেহের মধ্যে পড়ে। ফলে এই মেয়ে বিয়ে দেয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। আর কোন মানুষকে এভাবে বিপদে ফেলা ইসলাম সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে। [মুসলিম :১/৪৫৬; আবু দাউদ:১/২৮৪; তিরমিজি : ১/২০৭; ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৩/২১২]
কনে দেখার ক্ষেত্রে কেবল মাত্র কনের হাত ও মুখই দেখা যেতে পারে। অবশ্য কাপড়ের উপর দিয়ে যদি শরীরের সামগ্রিক অবয়ব দেখে নেয়া হয়, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। কেবল মাত্র বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই কনে দেখতে পারবে এছাড়া নয়। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে কনে দেখার সময় যদি কামোত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তাতেও কোন আপত্তি নেই। কেননা এটাতো শরীআত অনুমোদিত একটি প্রয়োজন। [হিদায়া:৪/৪৪৩;আল মুগনী:৭/৭৪;] আর যদি মেয়েরা কনে দেখে তাহলে প্রয়োজনে শরীয়তের সাধারণ রীতি অনুযায়ী নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত স্থানটুকু বাদ দিয়ে অবশিষ্ট পূর্ণ শরীর দেখতে পারবে। [টীকা-আবু দাউদ:২/২৮৪] এজন্যই কোন অঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিলে নির্ভরযোগ্য কোন নারীর মাধ্যমে তা যাচাই করে নিতে পারবে। পাত্রী দেখার জন্য পাত্রীর অভিভাবকগণের পূর্ব অনুমতি জরুরি নয়।
ছেলে কনেকে দেখলে দোষের মনে করা হয়। এই চিন্তাও ভুল। কারণ কনে দেখা সংক্রান্ত হাদীসগুলোতে বরকেই কনে দেখার নির্দেশ হয়েছে। সেখানে অভিভাবকদের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
তাছাড়া বর কনেকে না দেখে শুধুমাত্র অভিভাবকগণ দেখে বিয়ে সম্পাদন করলে বরের কনেকে পছন্দ নাও হতে পারে। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে দাম্পত্য জীবনে সৃষ্টি হয় অশান্তি। যার নজীর আমাদের সমাজে নেহায়েত কমও নয়। তাই বর নিজে কনেকে দেখে নেওয়াটাই অধিক সঙ্গত ও নিরাপদ। পাত্রী নির্বাচন ও আত্মীয়তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মাপকাঠি কি হবে? মহানবী সা. তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন।
সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, মহানবী সা. ইরশাদ করেছেন, চারটি বৈশিষ্ট্যের কারণে কোন মেয়েকে বিয়ে করা যায়। ১.তার সম্পদ। ২.বংশ-মর্যাদা। ৩. রুপ-লাবণ্য। ৪.তার দীনদারী। তন্মধ্যে দীনদার নারীকে বিয়ে করে দাম্পত্য জীবনকে সফল ও বরকতময় করে তোলে। [তিরমিযী:১/২০৭] উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দীনদারীর সাথে সাথে কনের রুপ-লাবণ্য, খান্দান, অর্থ-সম্পদ এবং প্রকৃতিগতভাবে ভালোলাগে এমন গুনকেও পাত্রী নির্বাচনের মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা যায়।