বঙ্গবন্ধু কী চেয়েছিলেন, আর হচ্ছে কী এখন?
হাবীব ইমন
আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক দল। এ রকমই তারা দাবি করে সবসময়। ১৯৫৫ সালে ২১ অক্টোবর বিশেষ কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। একসময় এই দলের নেতৃত্ব যেখানে প্রাধান্য ছিল অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছে তারা, সেখানে আজ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রাধান্য লাভ করছে মৌলবাদ গোষ্ঠীর প্রভাব। সেই দল বা সেই দলের সরকারের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারায় অসাম্প্রদায়িক দেশকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। মূলত পঁচাত্তর পরবর্তী প্রতিক্রিয়াশীল ভ্রান্ত ট্র্যাক ধরে চলেছে। আওয়ামী লীগের মতাদর্শ, যার মধ্যে ‘গণতন্ত্র’, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, ‘অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি’, ‘সমাজতন্ত্র’ তথা শোষণমুক্ত সমাজ ও সামাজিক ন্যায়বিচার বড় দাগে লেখা। এগুলো কোনোটিই আওয়ামী লীগ এখন পোষণ করে না, লালন করে না বললে কি ভুল হবে?
পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী দাবি করেছিল, এই কবিতাটাতে হিন্দুদের দেবী দুর্গাকে প্রমোট করে হিন্দুত্ববাদ উস্কে দিচ্ছে। দুর্গার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে সরকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাথায় হিন্দুত্ববাদ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চলতে থাকে। হয়তো অচিরে হিন্দুত্ববাদের প্রচারক হিসেবে দাঁড় করিয়ে জাতীয় সঙ্গীতও বাদ দিবে সরকার। বহুদিন ধরে এ গানটি বাদ দেওয়ার জন্য এ গোষ্ঠীটি দাবি তুলছে। তাদের দাবির কাছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব অসহায়। ৫ মের হেফাজতি তা-বে তাদের নেতৃত্বই সেইসময় বলেছিল, দেশ চলবে মদিনা সনদে। তেঁতুল হুজুরের কাছে ধর্ণা দিয়েছিল। যে ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষক বলে পরিচিত এই সরকারের আমলেই রামু, সাথিয়া, মালোপাড়া, রাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, নাসিরনগর মতো সাম্প্রদায়িক লুণ্ঠন এখন এতটাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে যে, মানুষ মুখ ফুটে প্রতিবাদ করতেও প্রায় ভুলে গেছে।
তা না হলে ওই মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে কেন এই দলটি বারবার নতজানু হবে? আওয়ামী লীগ আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নীতি, আদর্শ, কৌশল পরিবর্তন করে নয়া উদারবাদী নীতি গ্রহণের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, ইসলামি ভোট পক্ষে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়। তার মধ্যে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ৫ দফা চুক্তি, যার মধ্যে ছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে শরিয়া আইন চালু করার অঙ্গীকার, ’৯১ এ তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে ভোটের জন্য মগবাজারে গোলাম আযমের বাসায় কদমবুচি করতে পাঠানো, হেফাজত তথা ধর্মীয় মৌলবাদ গোষ্ঠীর সঙ্গে লিয়াজো রক্ষা করে চলা। কাজেই আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করার পালা, তারা সাম্প্রদায়িক, না অসাম্প্রদায়িক।
একদিন বঙ্গবন্ধু তার দলীয় নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমাদের দেশের নাম কী হবে?’ কেউ বলে, পাক বাংলা। কেউ বলে, পূর্ব বাংলা। বঙ্গবন্ধু বলেন, না, বাংলাদেশ। তারপর তিনি সেøাগান দেন, ‘জয় বাংলা’। তখন ওরা বিদ্রƒপ করে বলে, জয় বাংলা, না জয় মা-কালী! সে বঞ্চনা তিনি সেদিন সহ্য করেছিলেন। সেদিন ওরা বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে পারেনি। ‘জয় বাংলা’ বলতে বঙ্গবন্ধু বোঝাতে চেয়েছিলেন, বাংলাভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জয়, যা সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে।
লেখক: কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান