জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরেছেন তিনি
ড. আব্দুল্লাহ হেল কাফি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার রাষ্ট্রক্ষমতার শেষ পর্যায়ে। টানা আটবছর তিনি আমেকিরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। এই তিনি কেমন করেছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তার সফলতা বেশি, নাকি ব্যর্থতাÑ আলোচনায় স্থান পাচ্ছে তা। আমি মনে করি, ওবামার সাফল্যই বেশি। কারণ তার সময় বিশ্বব্যাপী তেমন কোনো হাঙ্গামা হয়নি। মোটামুটিভাবে বিশ্ব পরিস্থিতি শান্ত ছিল। বিশ্ব রাজনীতি শান্ত ছিল। পাশাপাশি ওবামা তার অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনায়ও অনেক সফল। তার বেশকিছু উদ্যোগ ছিল তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন সময় তিনি দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করেছেন, তা স্বাস্থ্যনীতিও প্রশংসিত হয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে কিউবার যে একটা বৈরি ভাব ছিল সেটাও উনি কাটিয়ে উঠাতে সক্ষম হয়েছেন। কিউবার সঙ্গে অনেকটা স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। পাশাপাশি ভেনিজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও উনি সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বলতে গেলে উনি সবদিক দিয়ে সফল। কারণ তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হোক এবং সমস্ত মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। পাশাপাশি ওবামা তার রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক যে মন্দা ছিল সেটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমি মনে করি, বারাক ওবামা সবদিক থেকেই সফল হয়েছেন।
জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ওবামা রাখতে পেরেছেন বলেই আমি মনে করি। বিশ্ব নিয়েও তিনি দায়িত্বশীল ছিলেন। ওবামা বলেছিলেন, পৃথিবীব্যাপী শান্তি আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কোনো মন্দাও থাকবে না। তিনি সেই মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে উনি উনার রাষ্ট্রে সফল হয়েছেন এবং বিশ্বব্যাপীও সফলতার সেই হয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলোÑ ওবামার আমলে কিন্তু লাদেনকে ধরা হয় এবং হত্যা করা হয়। সেটা যেভাবেই হোক। এদিক দিয়েও কিন্তু ওবামা সফল। কারণ লাদেন পৃথিবীর জন্য একটা হুমকি ছিল। ওবামার আগে যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি যখন তখন বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করতেন। ইরাক সহ অনেক দেশে যুদ্ধ বাধিয়েছেন। ওবামাকে সিরিয়া আক্রমণ করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি সিরিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াননি। পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে বহুদিনের একটা খারাপ সম্পর্ক, বৈরি সম্পর্ক অনেকটাই ভালো সম্পর্কের দিকে নিয়ে এসেছেন। এটাও উনার একটা সফলতা। ওবামার সঙ্গে কোনো রাষ্ট্রেরই বৈরি সম্পর্ক ছিল বলে আমার জানা নেই।
আব্রাহাম লিংকনের সময়ে একটা রাজপ্রথা হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে বহুদিন পরে এমন একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট আমেরিকায় হবে এটা ছিল অস্বাভাবিক। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হওয়া খুবই কঠিন ছিল। প্রায় একশত বছর বা তার অধিক পরে আব্রাহাম লিংকনের পরে একজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, এটা শুধু আমেরিকার জন্যই নয়, গোটা দুনিয়ার জন্যও একটা উদাহরণ হিসেবে থাকবে। কারণ কৃষ্ণাঙ্গ হলেই ঘৃনা ভাব ছিল। একটা নিন্দনীয় ব্যাপার ছিল। সেখানে ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এটা আমেরিকার জন্য না গোটা পৃথিবীর জন্য একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
পরিচিতি: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান