বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবসের জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী গণআদালতে জনগণ বিএনপির বিচার করবে
বিএনপির কাছ থেকে গণতন্ত্রের শিক্ষা নিতে হবেনা খালেদা এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দল। তাদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। ২০১৪ সালে বিএনপি যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে,আগুন সন্ত্রাস করেছে। এভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেওয়ার কারণে গণআদালতে জনগণ বিএনপির বিচার করবে।
প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ধর্মগুরুসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিয়েছে। যেভাবে তারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে জনগণ তাদের বিচার করবে। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। তিনি বলেন, ইসলামে আত্মঘাতীদের কোনো স্থান নেই। কেউ যেন ওই পথে না যায়, সেভাবে শিক্ষা দিতে হবে। আত্মঘাতীরা ভাবছে, তারা বেহেশতে যাবে, আসলে তারা বেহেশতে যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কথায় না কাজে বিশ্বাস করে, যা ওয়াদা করি তা পালন করি। অনেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ঠাট্টা করেছিল, তারা বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দেখিয়েছি।
শিক্ষায় সরকারের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ শিক্ষার্থীদের এতো বই বিতরণ করতে পারেনি। আমরা বিনামূল্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বই দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, এদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সেইভাবে সম্মানিত জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছি, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি মানুষের মুখে আল্লার রহমতে খাদ্য তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যারা বাকি, তাদের সবাইকে ঘর বানিয়ে দেবো। এছাড়া চিকিৎসাসেবা পাবে প্রতিটি মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়ার মামলায় হাজিরা প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তিনি এতিমের টাকা চুরি করেন, একবার হাজিরা দেন তো পরে আদালতে হাজিরা না দিয়ে পালিয়ে বেড়ান। তার কাছ থেকে রাজনীতি শিখতে হবে না। গণতন্ত্র শিখতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, জাতিসংঘে গিয়েছিল জনমত গড়ে তুলতে। বিএনপি তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে বলেন, তার আমলে ১৯টি ক্যু হয়েছিল। কারফিউ দিয়ে দেশ চালিয়ে ছিলেন তিনি। মানুষের স্বাধীনতা ছিল না। ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। তারা এক দিকে হত্যা করেছে, আর একদিকে আওয়ামী লীগের লোকজনকে ধরে নিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পরই বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পরই দেশের উন্নয়ন কর্মকা- থেমে যায়। ৭৫ এর পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, নিজেদের আখের গোছানোই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তারা কখনো জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি। কারণ তাদের দেহ এ দেশে থাকলেও মন পড়ে থাকত পাকিস্তানে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ২৫-৩০ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে পারত, সবাই সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারত।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির কথা উল্লেখ করে বলেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনী জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণের চাপে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল তারা। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলেন। আমরা সবাই সেদিন এখানে এসেছিলাম।
এদিকে গতকাল এই জনসভাকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকা উৎসবে পরিণত হয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। দুপুর আড়াইটায় ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্যদিয়ে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভা শুরু করেন এবং পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রী ৩টা ২৫মিনিটে সমাবেশ স্থলে আসেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম। এদিকে সভামঞ্চ এবং সোহরাওয়ার্দীর আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। সম্পাদনা: এনামুল হক