দ্বিপাক্ষিকভাবে সংকটের সমাধান করতে পারলে অনেক ভালো
শেখ সামস মৌরসালিন
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বিশেষ দূত এসেছেন ঢাকায়। মিয়ানমারের এই এগিয়ে আসাকে স্বাগতম জানানো এবং ইতিবাচক সাড়া দেওয়া উচিত বাংলাদেশের। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুটাই একমাত্র নয়, বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক একটা বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে নেই। বরং প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে অনেক অপারচ্যুনিটি, অনেক কো-অপারেশনের জায়গা আছে। তবে এটা ঠিক, রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে অনেক বিষয়ের প্রক্রিয়ার অগ্রগতি হচ্ছে না। রোহিঙ্গা ইস্যু দুটি দেশের মধ্যে একটা টেনশন তৈরি করে রেখেছে। বাংলাদেশের পক্ষে মেসেজটা বা বার্তাটা এমন যাওয়া উচিত যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হলেই দুইি দেশের উন্নয়ন তরান্বিত সম্ভব। এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে দুটি দেশ যৌথভাবে লাভবান হতে পারে। ওই জায়গাগুলোতে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব। যার মাধ্যমে দুটি দেশই উপকৃত হবে, লাভবান হবে। এভাবে যদি বাংলাদেশ বিষয়টাকে তাদের সামনে তুলে ধরতে পারে, আমার ধারণা মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া মিলবে।
প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে গত কয়েকমাসে। এদেশে প্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের সংখ্যাটাও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। যদিও এ তালিকায় শুধু নিবন্ধকৃতদেরই নাম উঠেছে। নিবন্ধন হয়নি এমন অনেক রোহিঙ্গাও আছে এখানে, যে সংখ্যাটা অনেক বেশি। এটা যেকোনো দেশের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ তো বটেই। বাংলাদেশের জন্য তো অবশ্যই। কিন্তু শুধু সংখ্যা নয়, বরং রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে এদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বহির্বিশ্বে যাচ্ছে সেখানে গিয়ে অনেকসময় তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হচ্ছে। যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে। সবাই মনে করছে, বাংলাদেশিরাই এটা করছে। অথচ তারা প্রকৃতই রোহিঙ্গা।
একদম ম্যাক্রো-লেভেলে যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাচ্ছে, পাবলিক সেন্টিমেন্টও কিন্তু ধীরে ধীরে নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম দিকে একটা পজেটিভ সেন্টিমেন্ট ছিল রোহিঙ্গাদের বিষয়ে। মানুষের মধ্যে কিছুটা মানবিক দিক কাজ করেছে। সেটা কিন্তু বেশিদিন থাকবে না। যখন দেখা যাবে, আমাদের এই সীমিত অর্থনীতির উপরে রোহিঙ্গারাও এসে ভাগ বসাচ্ছে, তখন স্থানীয় যারা আছে বা যে অঞ্চলগুলোতে তারা ভাগ বসাবে, তারা একটা সময় তা আর সহ্য করবে না। ওইদিক থেকে চিন্তা করলে যত দেরি হবে সমস্যা সমাধানে, ততই সমস্যা আরও বাড়বে।
আন্তর্জাতিক মহল বলতে যদি আমরা কোনো দেশকে বুঝাই, বিশেষ কোনো দেশ যখন এই জাতীয় ইস্যুতে জড়িত হয় কখনোই সে তার স্বার্থের বাইরে এসে কাজ করবে না। বরং তারা তাদের স্বার্থটাকেই আগে দেখবে। সেটা চীন হোক, ভারত হোক, যুক্তরাষ্ট্র হোক যেই হোক না কেন। সে যদি দেখে এখানে তার স্বার্থ জড়িত আছে তখনই সে মিয়ানমানেরর উপর চাপ দিবে যে, এই সমস্যার সমাধান করো। সেক্ষেত্রে যেটা হবে এই সমস্যা সমাধানের পর তারা একটা রিটার্ন চাইবে। নিজেরা বসে, দ্বিপাক্ষিকভাবে যদি সমস্যার সমাধান করা যায় তাহলে তা অনেক ভালো হয়। তখন অন্য কারও কাছ থেকে চাওয়াপাওয়ার বিষয় থাকে না।
পরিচিতি: সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান