রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। তিনি গতকাল বুধবার এই রিট আবেদন করেন। আগামী সপ্তাহে রিটের উপর শুনানি হতে পারে। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবাদ করা হয়েছে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন গঠন, কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর সংলাপ শুরু করেন। সংলাপ শেষ হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্যদিয়ে। এখন রাষ্ট্রপতি কি সিদ্ধান্ত নেন, সেই জন্য অপেক্ষা করছে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের মতো করে প্রস্তাব দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি সব দলের প্রস্তাবনা বিবেচনা
করবেন এবং সিদ্ধান্ত দিবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিবেন বলে সূত্র জানায়।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের মধ্যে কোনো কোনো দল রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশন আইন করার জন্য বলেছেন। আবার কোনো কোনো দল বলেছে তাদের দেওয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী তা করার জন্য। বিএনপি ১৩ দফা ও আওয়ামী লীগ ৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে।
সংবিধানের সপ্তম ভাগ, নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের সপ্তম ১ [১১৮ ।(১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া] বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন। (২) একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাহার সভাপতিরূপে কার্য করিবেন। (৩) এই সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরকাল হইবে এবং (ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এমন কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন না; (খ) অন্যকোনো নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনাররূপে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন, তবে অন্য কোনোভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন না। (৪) নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন। (৫) সংসদকর্তৃক প্রণীত যেকোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলি রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে: তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না। (৬) কোনো নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনেই নতুন কমিশনাররা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিবেন। এর আগেই রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিবেন নির্বাচন কমিশন আইন করে কমিশনারদের নিয়োগ করা হবে, নাকি সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হবে। রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিলে সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে আইন মন্ত্রণালয়। সংসদে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তর জন্য অপেক্ষা করছি। রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই হিসেবেই কাজ করা হবে।
রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের কথা বললে এখন যে সময় আছে এর মধ্যে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব কিনা এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে সেই হিসেবে কাজ করা হবে। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা পেলে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি কি সিদ্ধান্ত দেন তা দেখতে হবে। সূত্র জানায়, বিএনপি চায় তাদের প্রস্তাবনার আলোকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করুক আর আওয়ামী লীগ চাইছে তাদের প্রস্তাব মোতাবেক রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেন। ২৩টি রাজনৈতিক দল তাদের প্রস্তাব দিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। এখন রাষ্ট্রপতির কোর্টে বল। যা করার তিনিই করবেন। তার সিদ্ধান্ত দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আশা করি, তিনি যে আমাদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে বলেছিলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ায় তার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের প্রস্তাবটি বিবেচনা করবেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম