রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ ইসি পুনর্গঠনে অধ্যাদেশ জারির ও ই-ভোটিংয়ের প্রস্তাব
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও মুনওয়ার আলম নির্ঝর: আগের নিয়মেই সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষেই মত দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের উপরই পুরো দায়ভার ছেড়ে দিয়েছে দলটি। এছাড়া আওয়ামী লীগ আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে দলটি। পাশাপাশি তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সম্ভব হলে অধ্যাদেশ আকারে এবারই আইন জারির প্রস্তাবও দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল বুধবার বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে এসব প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এইচটি ইমাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এম জমির, সাংগঠনিক সম্পাদক দিপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইন বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। একঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে
৬টায় আওয়ামী লীগ ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংলাপ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইসি বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া দলের লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বেশ আগ্রহ নিয়ে আওয়ামী লীগের দেওয়া প্রস্তাবগুলো শুনেছেন এবং তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন।
ইসি বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা বলেছেন- ইসি বিষয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে আইনের কথা বলা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকার এই আইন করেনি। তাই আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আইন প্রণয়ন বেশ সময়সাপেক্ষ। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি কোনো বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এ সময় বলেন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা আনতে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ই-ভোটিং-এর কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসি পুনর্গঠনে চারটি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১১টি প্রস্তাব দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের চার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়েগের লক্ষ্যে সম্ভব হলে এখনই একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধি বিধানের সাথে জনমানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিংয়ের প্রবর্তন করা। উল্লেখ্য, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার আগেই নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে। আর সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে থাকা এই নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতিই।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিষয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগসহ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে ২৩টি রাজনৈতিক দল দেখা করেন। দলগুলো হচ্ছে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু), বাংলাদেশে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট, ইসলামি ঐক্য জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কম্যুনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব), গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, খেলাফত আন্দোলন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (আম্বিয়া) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল।