আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিক অসন্তোষ আইএলও কর্মকর্তাসহ ৩১ উসকানিদাতা চিহ্নিত
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও সুজন কৈরী: সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ‘উসকানিদাতা’ হিসেবে ৩১ জন জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের শ্রমিক নেতাকে চিহ্নিত করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
এই ঘটনার সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) ঢাকা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তাও যুক্ত রয়েছেন বলে উঠে এসেছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। উসকানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত শ্রমিক নেতারা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
গত ১২ ডিসেম্বর থেকে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই শ্রমিকদের অসন্তোষ আশপাশের কারখানাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়ে ওই এলাকার ৫৯টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থা নিরসনে বাণিজ্যমন্ত্রী, নৌমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। এর মধ্যে গ্রেফতার হন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নেতা। কয়েক দিনের টানা আন্দোলনের একপর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কাজে ফেরেন শ্রমিকরা। শুরু হয় উৎপাদন কার্যক্রম।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ১০টি মামলা হয়। শ্রমিক ছাঁটাই করা হয় প্রায় দেড় সহস্রাধিক। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে নতুন করে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ অসন্তোষকে পুঁজি করে ভেতরে ভেতরে উসকানিমূলক কর্মকা- চলছে এমন তথ্যও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। উসকানিদাতারা বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে ইন্ধন দিতে তৎপর রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি আদেশ আসছে। এটা দেখিয়ে শ্রমিক নেতারা বোঝাতে চাচ্ছেন, এত আয়ের পরও কেন শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হবে না এবং নতুন ওয়েজবোর্ড গঠন করা হবে না। এই উসকানিদাতার মধ্যে আইএলও ও বিদেশি একটি মহলের সরাসরি স্বার্থ রয়েছে। তারাও এই তৎপরতায় জড়িত। এ ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোরও ইন্ধন রয়েছে সেখানে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বর্তমানে গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে পার্টিসিপেশন কমিটি করা হচ্ছে। যে কমিটির তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিকরাই ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করছে। এতে করে বাইরের শ্রমিক নেতাদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। ফলে তারা শ্রমিক অসন্তোষ ঘটিয়ে পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কারখানাগুলোতে পার্টিসিপেশন কমিটি করার পর থেকেই শ্রমিক নেতারা এর বিরোধিতা করে আসছেন। এ কমিটি করায় তারা ক্ষুব্ধ। এ ক্ষোভ থেকেই তারা উসকানি দিতে পারেন। কারখানার সাধারণ শ্রমিকরা কখনোই কাজ ফেলে রাস্তায় আন্দোলনে যেতে চান না। বাইরের ইন্ধনেই তারা এ কাজ করেছেন।
জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, গোয়েন্দা তালিকায় কাদের নাম আছে তা জানা নেই। তবে আমার নাম থাকলেও তাতে উদ্বিগ্ন নই। আগেও এসব কথা শুনেছি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, আমি নাকি হাজার কোটি টাকার মালিক, আমার নাকি গুলশানে বাড়ি রয়েছে। আমরা সাধারণ শ্রমিকের স্বার্থে এবং শিল্পের স্বার্থে কাজ করি। এ শিল্পের কোনো ক্ষতি হোক আমরাও চাই না।
ইউনাইটেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুবেদা সরকার বলেন, আন্দোলনের সময় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রায় ১০-১২ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এখনো গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার আতঙ্কে আমরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র থাকছি।
এ বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুস সালাম বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের নজরদারি রয়েছে তাদের ওপর। তিনি বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কোনো আভাস আপাতত নেই, তবে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং করছি।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, আমার জানা মতে কারখানাগুলোয় এখন কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই। তবে শ্রমিক নেতাদের নজরদারিতে রেখেছি। তারা কোনো ষড়যন্ত্র করলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী