ক্রেতা ও চাহিদা না থাকায় আলুর বাজারে ধস
মতলুব হোসেন, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের কালাইয়ে আগাম জাতের আলু চাষ করে কৃষক বাম্পার ফলন পেলেও বাজারে ক্রেতা ও চাহিদা না থাকায় আলুর মূল্যে ধ্বস নেমেছে। তবে এলাকার অধিকাংশ কৃষক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ বা ধার দেনা করে লাভের আশায় আগাম জাতের আলু রোপন করে তা তুলে বিক্রি করতে গিয়ে বাজারে ক্রেতা ও চাহিদা না থাকায় এবং আলুর মূল্যে কম হওয়ার কারণে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এ সুযোগে কৃষকদের আলু কম দামে কিনে কৌশলে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও ফড়িয়ারা। তাই এলাকার কৃষকরা আলু বিক্রি করে পুঁজি তুলতে না পারাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ৫’শ ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিদ্ধারণ করা হলেও তা অতিক্রম করে দাঁড়িছে ১৩ হাজার ৬’শ হেক্টর জমি। বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ বা ধার দেনা করে লাভের আশায় অধিকাংশ জমিতে আগাম জাতের আলু রোপন করেছে এলাকার কৃষকরা। এসব জমিতে গ্র্যানোলা, ডায়মন্ড, মিউজিকা, রোমানা লাল, দেশী পাকড়ী লাল, এস্টোরিক, কার্ডিনাল, কারেজ ও লরা জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার আগাম জাতের আলুর বাম্পার ফলনও হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার অধিকাংশ কৃষক। কিন্তু বর্তমানে ফসলের মাঠ থেকে আলুর তুলে তা বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) গ্র্যনোলা জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা, ডায়মন্ড জাতের আলু ২৩০ থেকে ২৩৫ টাকা, মিউজিকা জাতের আলু ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা, রোমানা লাল জাতের আলু ২৫০ থেকে ২৫৫ টাকা এবং দেশী পাকড়ী লাল জাতের আলু ২৬০ থেকে ২৬৫ টাকায়। একদিকে যেমন আলু উৎপাদনের খরচ ও ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলন করতে গিয়ে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ হারে মজুরি দিতে হচ্ছে তেমনি কৃষক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ বা ধার দেনা করে লাভের আশায় আগাম জাতের আলু বিক্রি করতে গিয়ে বাজারে ক্রেতা ও চাহিদা না থাকায় এবং মূল্যে কম হওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন। তাছাড়া আগাম জাতের আলু বিক্রি করে মোটা অংকের লোকসান হওয়ায় চরম হতাশায় ভূগছেন তারা।
এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, আলুর বাজারে স্থানীয় আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও ফড়িয়ারা জোটবদ্ধ হয়ে বেশী লাভের আশায় কম দামে আলু কেনার জন্য মাঝে মাঝে কেনা-কাটা বন্ধ করছেন। এতে কৃষকরা তাদের কাছে আগাম জাতের কাঁচা আলু বিক্রির জন্য জিম্মি হয়ে পড়েছেন। একদিকে পাওনাদারের ধারের টাকা পরিশোধ অন্যদিকে সেচ ও কাজের লোকদেরও বিদায় করতে চাপে পরে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের আলু। এতে এলাকার ভূক্তভোগী কৃষকরা উৎপাদিত আলুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দিনের পর দিন লোকশান গুণলেও অল্প সময়েই মোটা অংকের লাভ করেছেন ওইসব স্থানীয় আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও ফড়িয়ারা। কেননা তারা কম দামে কাঁচা আলু কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ওই আলু পাঠিয়ে অল্প সময়ে অধীক লাভ করছেন তারা। সম্পাদনা: তারেক