আদর্শ মিশনারী সাহিত্য চর্চা অনুবাদক লেখক ফা. সিলভানো গারোল্লো আর নেই
ফাদার নরেন জে. বৈদ্য
১৮ জানুয়ারী, জাভেরিয়ান ফাদার সিলভানো গারেল্লো চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ফাদার সিলভানো গারেল্লো ৩১শে ডিসেম্বর ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইতালীতে জন্মগ্রহণ করেন। ২৫শে অক্টেবার ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে যাজকপদে অভিষিক্ত হন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গ মায়ের সেবার উদ্দেশ্যে মিশনারী হিসেবে খুলনায় আসেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যখন খুলনা মাইনর সেমিনারীতে ছিলাম তাকে পেয়েছি একজন বিজ্ঞ দক্ষ গঠনদাতা ফরমেটর হিসেবে। আমাকে প্রতিবেশীতে লেখার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন। আধ্যাত্মিক পরিচালক গঠনদাতা হিসেবে তারঁ অনেক সুণাম রয়েছে। বঙ্গমায়ের সেবায় বিশেষ করে খুলনা ধর্মপ্রদেশে ও ময়মনসিংহ ও ঢাকা ধর্মপ্রদেশে পালকীয় কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন ইতালীর নাগরিক জাভেরিয়ান ফাদার সিলভানো গারোল্লো। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরেই তিনি দক্ষিণ বঙ্গদেশে মিশনারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। খুলনা ধর্মপ্রদেশের অন্তগর্ত সাতক্ষীরা ধর্মপল্লীতে, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার সেমিনারীর পরিচালক, সেন্ট যোসেফ ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লী, সেন্ট মেরীস মুজগুন্নী ধর্মপল্লীতে ও খুলনা বয়রাতে পালকীয় কাজ করেছেন। ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের ভালুকা নলুয়াকুড়িতে কাজ করেছেন। অত:পর ঢাকা আসাদগেইট মোহাম্মদপুর জাভেরিয়ান হাউজে থেকে প্রকাশনা ও সাহিত্য চর্চা করতেন। বড়দিন ও ইস্টারের সময় বানিয়াচর ধর্মপল্লীতে পালকীয় কাজে সহযোগীতা করতে যেতেন। যশোর ট্রেনিং সেন্টার থেকে ’দ্বিমাসিক মঙ্গলবার্তা ’ প্রকাশিত হয় তার সম্পাদকের ও দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি খুলনার মাইনর সেমিনারীর গঠনদাতা ফরমেটর ও প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেন্ট যোসেফ ক্যাথিড্রাল ধর্মপ্রদেশের অধীনে ৩টি উপকেন্দ্রে গ্রামে গ্রামে যেতেন পালকীয় কাজ করতে। সংলাপের কাজের জন্য ‘জিবন বাণী’ লিফলেট ম্যাগাজিন প্রকাশ করতেন। যুবক যুবতীদের গঠনের জন্য সেমিনার প্রশিক্ষণের আয়োজন করতেন।
বাংলা সাহিত্য চর্চা, বই অনুবাদের কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন। ক্যাথলিক ধর্মশিক্ষার উপর বঙ্গীয় শতাব্দর্থ, মঙ্গলবাণীর আস্বাদন, জাগ্রত জীবন, যীশুর শাবাচ্ছধনী, জীবন বাণী, যীশুর বিষয়ে লোকেরা কি বলে, বাংলার গরীবের তিন বন্ধু, যীশুর ১০০ উক্তি, নারীদের অবদান, সাধু সাধ্বীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী, শিক্ষক শিক্ষকার ভূমিক ইত্যাদি। দি¦তীয় ভ্যাটিকান মহাসভার দলিল অনুবাদের কাজে স্বর্গীয় ফাদার ফ্রান্সিস সীমা ও ফা. বাণার্ডকে সহযোগীতা করছেন। বাংলাদেশের প্রায় ৯৯টি ধর্মপল্লীতে সিস্টারদের কনভেন্টে চ্যাপেলে তার আধ্যাত্মিক বই সমূহ নিয়ে ধ্যান করেন। আধ্যাত্মিক খোরাক নিবারণ করেন। প্রতিবেশী, স্বর্গমর্ত, খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার্তা ম্যাগাজিন ও অন্যান্য স্মরণীকায় তাঁর অনেক লেখনী রয়েছে যা প্রশংসার দাবীদার। খুলনা ধর্মপ্রদেশে যখন জাভেরিয়ান পুরোহিতগণ ৬০ বছরের জুবিলী পালন করেন তখন তিনি খুলনার ইতিহাস, জাভেরিয়ান পুরোহিতগণের কর্মকান্ড তুলে ধরেন। ইতালী ভাষা অনুবাদ করে বাংলায় বই প্রকাশ করেন। অনেককে তিনি প্রকাশনার কাজে চাকুরী দিয়েছেন। লিফলেট ছাপিয়ে খ্রিস্টের বাণী প্রচার করেছেন। প্রতিবেশী পত্রিকা যাতে খ্রিস্টভক্তদের ঘরে ঘরে পৌছায় ও পাঠ করেন সেজন্য তিনি সেমিনারীয়ানদের পাড়ায় পাড়ায় রবিবার দিন গীর্জা প্রতিবেশী বিক্রি করতে দিতেন এবং সেমিনারীয়ানদের লিখতে উৎসাহিত করতেন। তিনি পুরোহিতগণ ও ব্রত ধারিনীদের বই পড়তে ও লিখতে বাংলা সাহিত্য চর্চা অনুবাদের কাজ করতে অনুপ্রাণিত করতেন। খুলনা ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টভক্ত তাঁকে সাধু ধার্মিক বিজ্ঞ পুরোহিত বলে ‘সম্বোধন’ করতেন।