হাদিসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘বুখারি শরিফ’
মুফতি আজীজুল্লাহ কাসেমী
হাদিসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর মধ্যে বুখারি শরিফ অন্যতম। সিহা সিত্তা বা ছয় কিতাবের মাঝে বুখারি শরিফকে সবচেয়ে বিশুদ্ধগ্রন্থ বলে ধরা হয়। এ গ্রন্থ রচনা করেন মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বুখারি রহ.। তিনি একজন বিখ্যাত হাদিসবেত্তা ছিলেন। তার রচিত বুখারি শরিফ মুসলমানদের নিকট হাদিসের সবোর্ত্তম গ্রন্থ বিবেচিত হয়। তাকে আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদিস উপাধিতে ভূষণ করা হয়েছে। তিনি খোরাসানের (উজবেকিস্তান) বুখারা এলাকায় ১৯৪ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন।
ইমাম বুখারির জীবনের শ্রেষ্ঠতম কর্ম হচ্ছে এই হাদিসগ্রন্থের রচনা। তিনি স্বীয় শিক্ষক ইসহাক বিন রাহওয়াইহ রহ. থেকে এই গ্রন্থ রচনার প্রেরণা লাভ করেন। একদিন হজরত ইসহাক রহ. এমন একটি গ্রন্থের আশা প্রকাশ করেন, যাতে লিপিবদ্ধ থাকবে শুধু সহিহ হাদিস। শিক্ষার্থীদের মাঝে ইমাম বুখারি তখন এই কঠিন কাজে অগ্রসর হন। ২১৭ হিজরি সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি মক্কার হারাম শরিফে এই গ্রন্থের সংকলন শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৩ হিজরি সনে এর সংকলনের কাজ সমাপ্ত হয়। বুখারি শরিফের সংকলনকালে তিনি সর্বদা রোজা রাখতেন এবং প্রতিটি হাদিস গ্রন্থ সন্নিবেশিত করার আগে গোসল করে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করে মুরাকাবা ও ধ্যানের মাধ্যমে হাদিসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন।
এই গ্রন্থে তিনি সকল সহিহ হাদিস সংকলন করেননি। বরং সহিহ হাদিসের মাঝে যেগুলো তার নির্ধারিত শর্তে উন্নীত হয়েছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি এতে সহিহ হাদিস ব্যতিত অন্য কোনো হাদিস ওল্লেখ করিনি। তবে কলেবর বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক সহিহ হাদিসকে বাদ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার কিতাবে প্রতিটি হাদিস লেখার আগেই গোসল করেছি এবং দু’রাকাত নামাজ আদায় করেছি।’
অপর এক বর্ণনা থেকে জানা যায়Ñ ইমাম বুখারি রহ. তাঁর স্বীয় কিতাবের শিরোনামসমূহ রাসুলে করিম সা. এর রওজা এবং মসজিদে নববির মধ্যস্থলে বসে লিখেছিলেন এবং প্রত্যেক শিরোনামের জন্য দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছেন। ইমাম বুখারির প্রায় ৬ লাখ হাদিস মুখস্থ ছিল। বুখারি শরিফের পুরো নাম হলো, আল-জামি আল-সাহিহ আল-মুসনাদ মিন উমুরি রাসুলিল্লাহ ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি।
ইমাম বুখারি দীর্ঘ ১৬ বছর নিরলস সাধনা করে, ৬ লাখ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে এ প্রসিদ্ধ গ্রন্থখানি প্রণয়ন করেন। এতে মোট সাত হাজার একশত পঁচাত্তরটি হাদিস রয়েছে। আর পুনরুক্ত ছাড়া আছে চার হাজারের মতো হাদিস। সূত্র : ইসলামি বিশ্বকোষ