ভারত সফরে কেমন করল বাংলাদেশ?
অঘোর মন্ডল
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যেকার একমাত্র টেস্ট ম্যাচের গায়ে একটা সিল মারা ছিল, ‘ঐতিহাসিক টেস্ট’। কারণ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার জন্য। সেই পেক্ষাপট চিন্তা করলে শেষ পর্যন্ত এটাকে ঐতিহাসিক টেস্ট বলতে হয়। ঐতিহাসিক এই টেস্টে যতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা সেই অর্থে প্রায় কাছাকাছিই গেছে বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের মাটিতে যে সব বিদেশি দলগুলোর পারফরমেন্স বিবেচনায় রাখলে বাংলাদেশ অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছে। যদিও স্কোরকার্ডে লেখা ২০৮ রানের হার। সেটাকে যদি মাথায় না রাখি তাহলে ভারতের মতো দলের বিপক্ষে পাঁচ দিন মাঠে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য যে অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ সেটা ক্রিকেট বিশ্বকে দেখাতে পেরেছে আমাদের ক্রিকেটাররা। ভারতকেও একটা বার্তা দিতে পেরেছে।
দর্শক, বিজ্ঞাপনের কথা বলে এতদিন বাংলাদেশের প্রতি খুব একটা ভালো আচরণ করেননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কর্তারা, সেটাও প্রমাণিত হলো হায়দারাবাদে। ম্যাচটি দেখতে প্রচুর দর্শক এসেছিল, প্রায় প্রতিদিনই ছিল তাদের সরব উপস্থিতি। বাংলাদেশ ভারতে বিরুদ্ধে কেমন লড়াই করে তা দেখতে চেয়েছিল। লড়াইয়ের জায়গা থেকে দল হিসেবে বাংলাদেশ আরও একটু ভালো করতে পারত বা করা উচিত ছিল। যে সুযোগগুলো এসেছিল তা সঠিক ব্যবহার বাংলাদেশ পুরোপুরি করতে পারেনি। তবে যে লড়াই হয়েছে সেটা নিজেদের সঙ্গে নিজেদের লড়াই। বিশেষ করে মুশফিক ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে দলের বিপর্যয়ের মুখে দুর্দান্ত লড়াই করে তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন। তারপরেও ইনিংসটা আরও বড় হতে পারত, যদি যোগ্য সঙ্গী পেতেন। সেটা হলো না। দ্বিতীয় ইনিংসে মাহমুদউল্লাহর আউট, তিনি হয়তো সারাজীবন আক্ষেপে পুড়বেন। তার সামনে বড় সুযোগ ছিল, ভারতের মাটিতে একটা সেঞ্চুরি করার, অনেকদিন তিনি বড় স্কোর করতে পারছিলেন না। সেই সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু যেভাবে তিনি আউট হলেন সবচেয়ে দুঃখ তিনিই পাবেন। আমরা হতাশ হবো কিন্তু দুঃখ তারই বেশি।
সাকিব আল হাসান প্রথম ইনিংসটা যেভাবে খেলেছিলেন, ৮২ রান করেছিলেন। আপনি সাহসের কথা যদি বলেন, এইটাই ক্রিকেট। সাবিক তার মতোই খেলেছেন। কিন্তু দল তার কাছ থেকে যেভাবে চেয়েছিল সে রকম তিনি বোধহয় করতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটে যে দাঁড়িয়ে যাবেন উইকেটে, দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়। সেই জায়গায় সাকিব ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও বলতে হবে তার করা ৮২ রান এক অর্থে অনেক বড়। কিন্তু বড় রানকে যে আরও বড় করার সামর্থ্য সাকিবের আছে, সেটা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। দ্বিতীয় ইনিংসে তার আউটের ব্যাপারে কারও কিছু বলার নেই। কারণ ভালো ডেলিভারি, ভালো বলে তিনি আউট হয়েছেন, তাকে দোষ দেওয়ারও কিছু নেই। বাংলাদেশের আক্ষেপটা হয়তো বেশি হবে যে, হ্যাঁ হয়তো আরও একটা সেশন ব্যাট করার সুযোগ বা করা যেত। কামরুল ইসলাম রাব্বি যদি ৭০টা বল খেলতে পারেন, তাইজুল যদি ২৪টা বল খেলতে পারেন তাহলে আমাদের টপ-অর্ডার, মিডল অর্ডারের ব্যাট্্সম্যানরা আরেকটু ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে উইকেটে থাকতে পারলে শেষ সেশনটা পার করা সম্ভব অসম্ভব কি হতো জানি না। তবে এটুকু বলা যায়, ম্যাচটা আরও আকর্ষণীয় হতো।
ভারতের বিরুদ্ধে খেলা একমাত্র টেস্টটি খুব খারাপ করেছে বাংলাদেশ তা বলা যাবে না। বলতেই হবে, টেস্ট ক্রিকেটও উন্নতির জায়গাটি দেখা যাচ্ছে। ওয়ানডে বা টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে মোটামুটি আমরা একটা মান সেট করতে পেরেছি। টেস্ট ক্রিকেটেও তা করার সুযোগ আছে। তবে একটা জায়গা দল হতাশ করেছে ক্রিকেট বিশ্বকে। তাদের ফিল্ডিংয়ে দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। আপনি চাইলে ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করতে পারেন। আপনি চাইলেও রাতারাতি বড় ব্যাটসম্যান হতে পারবেন না, রাতারাতি বোলিংয়েও উন্নতি করা সম্ভব না। কিন্তু ফিল্ডিংটা সম্ভব। সেই জায়গাটা নিয়ে বাংলাদেশের ভাবা উচিত এবং আরও বেশি কাজ করার আছে আমার মনে হয়। ক্রিকেটারদেরও ফিল্ডিংয়ে আরও কিভাবে উন্নতির জায়গাটা পরিষ্কার করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে। কারণ বড় প্রতিপক্ষের দেওয়া অর্ধেক সুযোগও কাজে লাগাতে হবে, সেখানে অনেকগুলো সহজ সুযোগ এসেছিল তা কাজে না লাগাতে পারাটাই বাংলাদেশকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছিল ম্যাচে।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও ক্রীড়াবিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান