‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়’
রবিউল আলম
প্রতিটি জাতির, প্রতিটি প্রাণীর, প্রতিটি মানুষের নিজস্ব ভাষা আছে। ভাষা নিয়ে মতপ্রকাশের অধিকারও আছে। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অনেক দেশকেই লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু ভাষা নিয়ে সংগ্রাম বা যুদ্ধ করে জীবন দিতে হয়েছে বীর বাঙালিকে। যে কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা গর্বিত এই জন্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রয়াস ও আর কিছু মানুষের অক্লান্ত চেষ্টায় বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের স্বীকৃত হয়েছে।
আমি আমার মনের কথাগুলো স্বাধীনভাবে প্রকাশ করব, নিজের অনুভূতি অন্যের মাঝে বিলিয়ে দিব, মনের আনন্দে বাংলার জারি-সারি-পালা গান, কবিতা, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত গাইব আমার মাতৃভাষায় এটার আনন্দ তো বলে বোঝানো যাবে না। ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায় কলিম শরাফীর কণ্ঠে আওয়াজ উঠল, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি? না আমরা ভুলিনি, ভুলতে পারছিও না, সারা পৃথিবীকেও ভুলতে দেব না।
২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেনÑ রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার সহ অনেকেই। বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখেছে, যে বাঙালিরা ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে, তাদের স্বাধীনতা কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। শুরু হলো স্বাধীনতার আন্দোলন, মুক্তির মিছিল। পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলন এবং অবশেষে নির্বাচনের অধিকার আদায়ে বাঙালি ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ায়। মুক্ত হয় বাংলা। মুক্তি পায় বাংলাদেশ।
জাতির জনকের আহ্বানে সাত কোটি বাঙালি ঝাপিয়ে পড়ল মুুক্তিযুদ্ধে। নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন এবং অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হলো বাংলার স্বাধীনতা। দেশ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে, ভাষাকে বুকে ধারণ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে জাতির জনক বলেছিলেন, কবি গুরু তোমার কথা আজ মিথ্যে হয়েছে, আমার বাঙালি মানুষ হয়েছে, মুক্তি অর্জন করেছে স্বাধীনতার মাধ্যমে, সমগ্র বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে বাঙালি জাতি তাদের অধিকার আদায় করতে জানে।
কিন্তু হায়েনার দল পিছু ছাড়ল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলা ভাষার বিস্তারে আবারও বাধাগ্রস্ত করল। মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাইতে পারবে না, ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করতে পারবে না, ভাষা দিবসে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারবে না। এগুলো করলে আমরা বাঙালিরা সবাই হিন্দু হয়ে যাব, ধর্ম থাকবে না ইত্যাদি অপপ্রচার আর ফতোয়া জারি করা হলো। তবুও এগিয়ে চলেছে বাংলা ভাষার মর্যাদার কাজ।
’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে আশায় বুক বেঁধেছিলাম এবার হয়তো বাংলাকে মাদ্রাসায় প্রবেশ করানো যাবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি নেই। জাতীয় সংগীত হিন্দু ব্যক্তি লিখেছে বলে তা গাওয়া যাবে না, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি গান মুসলমান লিখেছে, বাংলা বললে নাকি ধর্ম থাকবে না ইত্যাদি। শুরু হলো মানুষের ভোটের অধিকারের আন্দোলন, হায়েনার হাত থেকে ভাষা ও জাতীয় সংগীত রক্ষা করতে হবে। ’৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় এসেও নানা প্রতিকূলতায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত ও বাংলা ভাষা পুরোপুরি চালু করতে পারেনি।
বাঙালি পারে না এমন কিছুই নেই, প্রয়োজনে ২০১৯ সালে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে প্রমাণ করতে হবে ভোটের মাধ্যমে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাতৃভাষা রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন সাধন করে পৃথিবীর উন্নত জাতি হতে চাই। ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে পারবে না, কাইরা নিতে দিব না, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান