পদ্মা সেতু বিলম্বের দায় নিক বিশ্বব্যাংক
উম্মুল ওয়ারা সুইটি
পদ্মা সেতু নিয়ে আইনি হারের আগেই বিশ্বব্যাংক হেরেছিল বাংলাদেশের দৃঢ়তার কাছে। অজেয় দেশ প্রমাণ করেছে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারে এই জাতি। বিশ্বব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান কেনই বা এই ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে মামলা মোকদ্দমায় গিয়েছিল? এই প্রশ্ন গত কয়েকদিন ধরে ঘরে ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই নিয়ে সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ এবং শীর্ষ পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক ও ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে বিষোদগার চলছে। কেউ বলছে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক, আবার কেউ বলছেÑ যারা দেশের অভ্যন্তর থেকে ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক।
বাস্তবে এসব মামলা মোকদ্দমা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। গত কয়েকদিনে ক্ষমতাসীনদের আলোচনা থেকে এবং পদ্মা সেতুর বর্তমান পরিস্থিতি থেকে এটা বলা যায়, পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া এবং দুর্নীতির অভিযোগ মামলা করা, আমাদের বিশাল অংকের একটি আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের বৈঠকেও বিষয়টির অবতারণা করেছেন।
বিশ্বব্যাংক নিশ্চয়ই এই অংক কষছে। তাদের কারণে সেতুর কাজে ৫ বছর বিলম্ব হয়েছে অর্থনীতিবিদরা ধারণা দিয়েছেন, দেশের বৃহত্তম এই সেতু হলে প্রতিবছর জিডিপিতে যোগ হবে ১.২ শতাংশ। টাকার অংকে এটা ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ টাকার অংকে এই সেতু পাঁচ বছর আটকে যাওয়ায় ডিজিপিতে এক লাখ কোটি টাকা যোগ হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ।
বিশ্বব্যাংক যদি সরে না যেত এবং মামলা না করত তাহলে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ হতো। আর এখন শেষ হবে ২০১৮ সালে। অনেকে বিশ্বব্যাংকে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছে। বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবশ্য মামলার এক বছর পরই বুঝতে পেরেছিলÑ ভিত্তিহীন অভিযোগ ছিল তাদের। আর যখন তারা দেখেছে বাংলাদেশ সরকার তাদের কিছুদিন অনুরোধ করার পর নিজেরাই অর্থায়ন করে সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করেছে, তখন থেকেই বিশ্বব্যাংক নমনীয় হয়েছে।
আমাদের এখন উচিত বিশ্বব্যাংকে আমাদের যে নির্বাহী পরিচালক আছেন তার বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে তোলা উচিত। ভবিষ্যতে যেন এ রকম ঘটনা না ঘটে। যেসব মানুষের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। যারা ব্যক্তিস্বার্থে দেশের ক্ষতি করতে দ্বিধা করে না। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংককে যা জবাব দেওয়ার তা দিয়েছে। আর এই মামলা খারিজে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও এই প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা সুনাম ক্ষুণেœর ভাগ পেয়েছে। তাই বিশ্বব্যাংকের নতুন করে ক্ষমা চাওয়াতেই বাংলাদেশের আর্থিক লাভ পুষিয়ে উঠবে না। বরং বিশ্বব্যাংকে এখন উচিত পদ্মা সেতুতে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে, সেটি থেকে বেরিয়ে আসা। অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই আর্থিক পুষিয়ে দেওয়া।
লেখক: চিফ রিপোর্টার, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান