বিএনপি কি কোরামিনও নেবে না?
অজয় দাশগুপ্ত
বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল বলেছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা-চিন্তার এই দিকটা জানা ছিল না। এই অসম্ভব সম্ভবের দেশে কতকিছুই না ঘটে। প্রয়োজনে বাঘে ছাগলে একঘাটে পানিও খায়। খবরটা সত্য ধরে নিয়েই বলি, এর ভিতর মহানুভবতা বা উদারতা আছে ভাবলে বিরাট ভুল হবে। এমনকি কৌশলও নেই। এটা প্যাঁচে পড়ে একঘাটে পানি খাওয়ার মতো।
বিএনপি যদি তাদের দলীয় অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায় এখন এর বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার একগুঁয়ে মনোভাবের দিন শেষ। তিনি মানেন কি মানেন না জানি না, তবে এখন তার ক্যারিশমা শেষ। যেটুকু মিটমিট করে জ্বলছে কোনোভাবে একটি বিচারে সাজা হলে তাও নিভে যাবে। সরকার বা খালেদা বিরোধীরা বসে নেই। যে সাইলেন্ট মেজরিটির জোরে বিএনপি এতদিন বুক ফুলিয়ে চলত সে আর মাঠে নামবে না। সমর্থন থাকলেও তারা কোনো ঝুঁকি নেবে না। তাছাড়া আইনগত ঝামেলার পাশাপাশি পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলে নিবন্ধন বাতিলের দুর্ভাবনাও এড়িয়ে চলা যাবে না। কিন্তু কে তাদের গ্যারান্টি দেবে ভোটে দাঁড়ালেই গদি মিলবে?
বিএনপির এই কঠিন সময়ে গুজব আছে বড় বড় নেতাদের অনেকেই ঘাপটি মেরে চান্সের অপেক্ষায়। এবার বেগম জিয়া না এলে তারাই নাকি বিএনপির নামে ইলেকশন করবে। করুক বা না করুক তারা যে সক্রিয় না সেটা তো চাক্ষুস। কেউ কোনো কথা বলে না। যা প্রলাপ বকে একাই রিজভী। মাঝে মাঝে ফখরুল সাহেব।
ও হ্যাঁ, আর একজন আছেন বটে। গয়েশ্বর রায়। কোনো এক কারণে ইনি নিরাপদ ও সরব। মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলেন দল তো দল দেশেরও পিলে চমকে যায়। এই যেমন ফখরুল সাহেবের কথা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, নতুন সিইসি ও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া নাকি জাহান্নামে যাওয়া। বাবুজী জান্নাত-জাহান্নামের কি বোঝেন, আর কোনটা বেহেশত, কোনটা দোজখ সেটারই বা কি জানেন? কিন্তু এই যে হটকারী কথা এবং সমঝোতা বা লাইনে আসার পথে বাধা দেওয়া এর পরিণাম বিএনপিকে নিঃশেষ করে দিতে পারে।
জনবিচ্ছিন্ন হবার কুফল, ষড়যন্ত্রের বদদোয়া আর যুবরাজের বাড়াবাড়িতে দল এমনিতেই গৃহবন্দি। জাতির জনকের শোকদিবসে কেক কাটার পাপ এখনো ঘোচেনি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এমন মনোভাব ও কথায় এটাই প্রমাণ হয় বিএনপি এখন আসলেই এতিম। বাঁচতে হলে লাইনে আসার বিকল্প নেই। গণতন্ত্র দেশ ও রাজনীতির স্বার্থে তাকে খোলস ছাড়তে হবে। হামবড়া ভাব কংকালের মানায় না। বিএনপি কি এটা বোঝে?
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান