মার্কিন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও এফবিআইর প্রতিবেদন ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের তিন উপদেষ্টার সঙ্গে রুশ গুপ্তচরদের যোগাযোগ
লিহান লিমা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলাকালে রাশিয়ান গুপ্তচরদের সঙ্গে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, মার্কিন প্রশাসন এর বরাত দিয়ে সিএনএন এই তথ্য জানায়।
মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুই সদস্য সিএনএনকে জানায়, নির্বাচনের আগে ও পরে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সাথে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের যোগাযোগ ছিল। এই যোগাযোগ ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির পথ সুগম করেছিল।
মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভ্রমণ রেকর্ড, কল লিস্ট ও ফোন রেকর্ড অনুসন্ধান করে দেখেছেন ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ক্রেমলিনের যোগাযোগ ছিল। ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের চেয়ারম্যান পল ম্যানার্পট, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কার্টার পেজ ও সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করা মাইকেল ফ্লেন এর বিরুদ্ধে এই প্রমাণ পাওয়া যায়।
ম্যানার্পট এই অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, ‘এটি অযৌক্তিক, এটি ১০০ ভাগ অসত্য। আমি জানি না মার্কিন প্রশাসন কিভাবে এই তথ্য পেল কারণ এই রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমার জানা মতে, ক্যাম্পেইনের সময়ে বা এর আগে ও পরে আমি কোনো রাশিয়ান তদন্ত অফিসারের সাথে কথা বলিনি এবং আমি কখনোই রাশিয়ান সরকার বা পুতিন প্রশাসনের সাথে কোনোভাবে জড়িত ছিলাম না। আমি এটি কখনোই চাইব না যে মানুষ আমাকে রাশিয়ান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলে জানুক।’
ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের চেয়ারম্যান পল ম্যানার্পট এই দায়িত্বের আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের রাজনৈতিক পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। ম্যানার্পট ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনের নেতা ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ও তার দল থেকে ১২.৭ মিলিয়ন ডলার নিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পদ হতে পদত্যাগের ২ দিন পর এপির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে তিনি ওয়াশিংটনের দুই বিখ্যাত লবিং ফার্মকে গোপনে ইয়ানুকোভিচের দল হতে ২.২ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের সাথে সাক্ষাৎকারে কার্টার পেজ তার রাশিয়ান সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বলেন, ‘এটি পুরোপুরি মিথ্যে এবং অসম্ভব।’ ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কার্টার পেজ এর আগে তিনি রাশিয়ার তেল কোম্পানি গেজপ্রোমর ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি তিন দিনের সফরে মস্কো গিয়েছেন ও সেখানকার একটি স্কুলে ভাষণ দিয়েছেন এবং সেপ্টেম্বরে রাশিয়ান ব্যবসায়ী ও কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেওয়া এক সূত্রে জানা যায়, তিনি প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইগোর সেসেইন (রোসনেফট কোম্পানির সিইও) এর সাথে দেখা করেছেন ও তার সাথে এই আলোচনায় ওবামা প্রশাসনে প্রণীত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কথোপকথন হতে পারে। উল্লেখ্য পেজ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওবামা প্রশাসনের জারি করা নিষেধাজ্ঞার একজন সমালোচক ছিলেন।
তদন্ত সূত্রে আরও বলা হয়, রাশিয়ান হ্যাকারদের দ্বারা ডোমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির ই-মেইল হ্যাক হিলারি ক্লিনটনের হোয়াইট হাউসের স্বপ্ন ভাঙার একটি মূল কারণ। তবে এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ই-মেইল হ্যাক কিংবা নভেম্বরের নির্বাচনের সাথে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের কোনো সংযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে ক্যাবল নেটওয়ার্ক অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, ট্রাম্পের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শদাতারা রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। সিএনএন, দ্য ডেইলি ডোট, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, সম্পাদনা: এম রবিউল্লাহ