বাংলা ভাষা বিদেশীদের শেখাতে স্কলারশিপ দেয়া হবে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট বাংলা ভাষার বিকাশে ও প্রসারে বিদেশীদের বাংলা ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বিদেশী যে সব স্টুডেন্ট বাংলাদেশে পড়তে আসে তাদেরকে। এই জন্য তাদেরকে তিন মাসের একটি কোর্স করানো হবে। ইন্সটিটিউট থেকে ফুল স্কলারশিপ দেওয়া হবে।
বিদেশী যারা বাংলাদেশে আসেন কাজের জন্য তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী। ইউনেস্কোর ক্যাটারগরী ২ এর যে ক্রাইটেরিয়া রয়েছে সেগুলো পূরণ করার জন্য কাজ করছে ইন্সটিটিউট। ২০৩০ সালের মধ্যে টার্গেট রয়েছে। মহাপরিচালকের আশা , ২০৩০ এর আগেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশী স্টুডেন্টরা বিদেশে গেলে তাদেরকে ওই দেশের ভাষা শিখতে হয়। এরমধ্যে ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, জাপানী, জার্মান, স্প্যানিশ, চাইনিজ ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষা রয়েছে। এটা তাদের ওখানে নিয়ম ওই সব দেশে পড়তে গেলে তাদের দেশের ভাষা শিখতে হবে। তিনি বলেন, আমরাও এমন নিয়ম করতে চাইছি। এখানে যেসব আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টরা আসবে তারাও বাংলাভাষা শিখবে। এইভাবে বাংলাভাষা বিদেশীদের কাছে আরও পৌঁছে দিতে পারবো।
তাদের লক্ষ্য রয়েছে এই বছর থেকেই এটা চালু করা। পাশাপাশি বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী এবং বেসরকারি সেক্টরের যারা কাজ করেন তাদেরকে দশটি বিদেশী ভাষা শেখানো হবে। এরমধ্যে রয়েছে ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, জাপানী, জার্মান, স্প্যানিশ, চাইনিজ, আরবের বিভিন্ন দেশের ভাষাও শেখানো হবে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে দশটি ভাষায় বেশি মানুষ কথা বলে ওই ভাষা শেখানো হবে। এই জন্য দুই বছরের ভাষা প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিলেবাসও তৈরি করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ইমতীয়াজ আলী বলেন, আমরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করছি। ওই প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্র করা হবে সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সব আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে।
২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সম্মেলন। সেখানে দেশে বিদেশের বিভিন্ন অতিথিরা যোগ দিবেন। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবেন। এবারে সেমিনারের শিরোনাম করা হয়েছে বাংলাদেশের বাংলা উপ ভাষার সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সেখানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইউনেস্কোর কনসালটেন্ট অনবিতা আবিব। তিনি একজন পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত। তিনি ভারতীয়। বর্তমান ভ্যাঙ্কুভার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট থেকে আগামী বছর থেকে চালু হবে মাতৃভাষার জন্য পদক। এই পদকের নাম করণ করা হবে একুশের নামের নামকরণে। পুরস্কারের মধ্যে থাকবে ক্রেস্ট, সম্মাননা, পুরস্কারের সম্মানী। সম্মানীর পরিমাণ হবে এক থেকে তিন লাখ টাকা। এই পুরস্কারের অর্থ নির্ধারণ করবে সরকার। ইতোমধ্যে ইন্সটিটিউট থেকে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকের মতো এটিও একটি পদক হবে। ওই পদকের সম পরিমাণ হবে পুরস্কারের অর্থ। স্বর্নপদক দেওয়া যাবে না কারণ স্বর্ণ পদকের স্বর্ণ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ওই বিতর্কের কারণে স্বর্ণ পদক বাদে অন্য কিভাবে দেওয়া যাবে সেটা বলা হয়েছে। এই ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিবে।
মহাপরিচালক বলেন, এই পদক দেওয়া হবে দুটি। মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশে যিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। পুরস্কারের জন্য দেশী ও বিদেশী যে কেউ মনোনীত হতে পারেন। পুরস্কারের জন্য অনলাইনে নাম চাওয়া হবে আর ওই নামের মধ্য থেকে পুরস্কার প্রদান কমিটি যোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করে বের করবেন।
ইন্সটিটিউট থেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষার উপর সার্ভে করা হয়েছে। ওই সার্ভের কাজও শেষ করা হয়েছে। মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য কাজ চলছে। দশটি ভাষা ঠিক করা হয়েছে। ওই ভাষার উপর বই করা হবে। ডিকশনারীও করা হবে। এক একটি ভাষায় ডিকশনারী করার জন্য যে ওই ভাষার দক্ষ জনবল দরকার সেটা পেতে কঠিন হচেছ।
এছাড়াও ইন্সটিটিউট থেকে সরকারে কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। উপভাষা বাংলা এর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার জন্য খুলনা ও রংপুরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আরও দুটি প্রশিক্ষণ হবে।
ইন্সটিটিউটের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্ম পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে ইন্সটিটিউটের ভবন সম্প্রসারণ করা হবে। সেখানে স্টুডিও, সেমিনার রুম ও ইউনেস্কো কনফারেন্স সেন্টারও করা হবে।
এদিকে মহাপরিচালক আরও জানান, ইন্সটিটিউটে একটি আর্কাইভ করা হবে। সেই আর্কাইভ হবে আর্কাইভ ফর দ্য রাইজিং সিস্টেম অব দ্য ওয়ার্ল্ড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা ও বইয়ের বিভিন্ন জিনিসও আর্কাইভে রাখা হবে।
ইতোমধ্যে ইন্সটিটিউটে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় দুটি নিউজ লেটার প্রকাশ করা হচ্ছে নিয়মিত। ভাষা ও ভাষা প্রসঙ্গ নামে একটি বইও প্রকাশ করা হয়েছে। লিথুনিয়ার ইতিহাস ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। ই-বুক করারও কাজ চলছে। সম্পাদনা: এনামুল হক