সংসদে অবজারভারের বিরুদ্ধে শামিম ওসমানের অধিকার ক্ষুণেœর নোটিস গ্রহণ
ডেস্ক রিপোর্ট: গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের জের ধরে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দেওয়া বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœর তিনটি পৃথক নোটিস সংসদ গ্রহণ করেছে। শামীম ওসমান ও তার পরিবারকে ‘জড়িয়ে’ ইংরেজি পত্রিকা অবজারভার, প্রথম আলো ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে নোটিস দেন তিনি। নোটিস তিনটির মধ্যে অবজারভার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে দেওয়া নোটিস গ্রহণ করলেও অন্য দুটি নিউজ কার্যপ্রণালী বিধির শর্ত পূরণ না হওয়ায় স্পিকার তা নাকচ করে দেন।
বুধবার জাতীয় সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন ও ৭১ বিধির নোটিস স্থগিতের পর স্পিকার শামীম ওসমানের নোটিসের প্রসঙ্গটি তোলেন। নারায়ণগঞ্জের সরকারি দলের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গত ২৩ জানুয়ারি অবজারভার পত্রিকায় চড়ষরপব ধিরঃ চগ ড়ৎফবৎ ঃড় পৎধপশফড়হি ড়হ ফৎঁমং ষড়ৎফ ও গত ১ জুন ২০১৪ তারিখে প্রথম আলোয় ‘আইনজীবীকে হত্যায় অনুতপ্ত র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা’ শিরোনামে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে তাকে জড়িয়ে এবং গত ২৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সংসদ সদস্যের বাবাকে জড়িয়ে রিপোর্টে ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুণেœর অভিযোগ এনে ১৬৪ বিধিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্পিকারের প্রতি অনুরোধ করেন।
নোটিস তিনটির বিষয় কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়েছে উল্লেখ করে স্পিকার সংসদকে বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নোটিসটি বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত বিধি ১৬৫ (২) অনুযায়ী বিশেষ অধিকার প্রশ্ন উত্থাপনের শর্তাবলী পূরণ করেনি মর্মে প্রতীয়মান হয়। কেননা কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৫ (১) এ বলা হয়েছে, কোনো সদস্য এক বৈঠকে অনুরূপ একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন না। ১৬৫(২) বিধিতে বলা হয়েছে, প্রশ্নটি সাম্প্রতিক সংঘটিত কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং তা প্রথম সুযোগেই উত্থাপন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, চলতি অধিবেশনের ২৬ জানুয়ারি সংসদ সদস্য এনামুল হক প্রথম নোটিসের অনুরূপ একটি নোটিস দেওয়ার পর সংসদের ওইদিনের বৈঠকে তা উত্থাপিত হয় এবং কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৮ বিধি অনুযায়ী সংসদ কর্তৃক তা বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরিত হয়। সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় নোটিসসমূহ ১৬৫ (২) অনুযায়ী বিশেষ অধিকার প্রশ্ন উত্থাপনের শর্তাবলী পূরণ করেনি তবে প্রথম নোটিসটি কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৯ বিধি অনুযায়ী বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হলো।
স্পিকারের সিদ্ধান্ত মেনে ফ্লোর নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার হত্যা মামলার প্রতি ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, আপনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা মেনে নিয়েছি। কিন্তু প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এই দুটি পত্রিকা ক্রমান্নয়ে শুধু আমাকে নয়, তারা বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। তবে আপনি বলেছেন, যেই সময় ঘটনা সংঘটিত হবে সেই সময়ে আমাকে এটা উত্থাপন করতে হবে। আমি এটার সঙ্গে একমত। কিন্তু যখন কোনো বিষয় আদালতে বিচারাধীন থাকে সেই বিষয়ে কিন্তু আলোচনার সুযোগ থাকে না। সেই কারণে সেই সুযোগ আমার কাছে ছিল না। আপনি লক্ষ্য করেছেন ৩৮ মাস আমি অপেক্ষা করেছি। আইনি কারণেই এটা বিলম্বিত হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার ছিল না। আমি আইনি বেড়াজালে পড়েছি। বিচারাধীন বিষয় বিধায় আমি আলোচনা করতে পারব না। যেহেতু রায় হয়েছে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই এখন উত্থাপন করছি।
ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুটি পত্রিকা ওয়ান ইলেভেনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা করলেন। আল্লাহর রসুল (স.) নিয়ে এই পত্রিকা কটূক্তি করেছে। তাহলে কি তারা কোথাও জবাব দেবে না। আমি জানি তারা সুযোগ পেলে আবারও আমাকে ক্ষতবিক্ষত করবে। আমি এতে কেয়ার করি না। কারণ আমি আল্লাহ ও রসুলের (স.) পথে আছি এবং আমি এমন কোনো কাজ করি না যে পৃথিবীর কোনো বান্দার কাছে আমাকে মাথা নত করতে হবে। আমি ক্ষতবিক্ষত হতে পারি তবে আমার অজুহাতে যাতে আর কেউ ক্ষতবিক্ষত না হয় সেই ব্যবস্থা আপনি করেন।