ভাষা সাহিত্য চর্চায় মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী
মুফতি মুহাম্মদ আরাফাত
আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ.। তিনি দক্ষিণ বাংলার ফরিদপুর জেলায় ১৮৯৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি আব্দুল্লাহ ও মাতা আমেনা খাতুন। দাদা চেরাগ আলী ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সৈনিক। আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী মায়ের কোলেই তার কথা ফোটে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দিয়ে। হিন্দু প-িত বাবুর হাতে তার হাতেখড়ি। বরিশালের সুটিয়াকাঠি স্কুল ও বাঘারিয়া স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন কলকাতা আলিয়ায়। স্কলারশিপ অর্জন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। লাভ করেন হজরত থানভীর সাহচর্য। দ্বীনি শিক্ষায় উচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন প্রথমে সাহারানপুর মাযাহিরুল উলুম ও পরে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে। শিষ্যত্ব লাভে ধন্য হন হজরত মাদানী কাশ্মিরী ও শায়খুল আদবের। দেশে ফিরে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন বি-বাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়ায় হাদিসে রাসুলের বাণী ছড়িয়ে। ঢাকায় ফিরে প্রতিষ্ঠা করেন আশরাফুল উলুম বড় কাটারা। পরে জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ। চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে তার হাদিসে রাসুলের সুবাতাস। কর্মজীবনে পূর্ণ সময়ে হাদিসে রাসুলের দরসে আলো ছড়িয়েছেন আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ.। তার পরশে প্রদীপ জ্বলেছে বোখারির প্রথম বাংলা ব্যাখ্যাকার শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ., ইসলামি রাজনীতির প্রাণপুরুষ আল্লামা মুফতি ফজলুল হক আমিনী, সৈয়দ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাইসহ অসংখ্য শিষ্যের।
তিনি ছিলেন অনুপম প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠা করেছেন এমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ, দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা, বাগেরহাট গজালিয়া মাদরাসাসহ বহু মাদরাসা মসজিদ। ছিলেন সফল সংগঠক। গঠন করেছেন খাদেমুল ইসলাম সংগঠন। আল্লাহভীরুতা ও আধ্যাতিকতায় তার দৃষ্টান্ত বিরল।
আল্লামা শামসুল হক র. যেমন তুখড় রাজনীতিবীদ, আদর্শ শিক্ষক, সংগঠক ও আধ্যাতিক রাহবার তেমনি তিনি ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যসাধক। বলা যায় সেবকও। শৈশব থেকেই তার সাহিত্য চর্চার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। কবিতা রচনা ও গদ্য লিখতেন ছোটবেলা থেকেই। তার কলম ছিল শাণিত। লিখনী ছিল ক্ষুরধার। লেখা ছিল সহজ সরল। ভাষা ছিল সাবলিল প্রাঞ্জল। তিনি প্রচলিত ভাষা ব্যবহার করতেন। বাংলা ভাষায় তার পা-িত্ব ছিল চোখে লাগার মতো।
আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. মাতৃভাষায় ছোট বড় প্রায় দুইশত কিতাব রচনা করেছেন। তিনি বিষয়ভিত্তিক সহ¯্রাধিক প্রবন্ধ লিখেন। তিনি বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম রচিত তাফসিরে হক্কানী রচনা করেন। তার লিখিত উল্লেখযোগ্য রচনা, ‘ভূল সংশোধন’, ‘আল্লাহর পরিচয়’, ‘হালাল হারাম’, ‘জীবনের পণ’ ইত্যাদি। আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. ছিলেন বাংলা ভাষা সাহিত্যের প্রেরণা। তিনি বাংলা ভাষা চর্চায় ছাত্রসমাজের মাঝে যোগাতেন অনুপ্রেরণা। আলেম সমাজের মাঝে যোগাতেন উৎসাহ উদ্দীপনা। তার প্রতিটি মাদরাসায় ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। ছাত্রদের দিয়ে লেখাতেন রোজনামচা, দেয়ালিকা। করাতেন ছোট কাগজ বা মাসিক পত্রিকা। টেনে ধরেছেন বাংলা ভাষার হাল। জাগ্রত করেছেন উদাসিনতার ঘুমে আচ্ছন্ন জাতির বিবেক অতন্দ্র প্রহরী আলেম সমাজকে। উদ্ধার করতে শিখিয়েছেন নিজেদের হারানো ঐতিহ্য। বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামি ভাবধারার যে কয়জন সাহিত্যিক বা ভাষাবিদ রয়েছেনÑ সবই তার প্রেরণার ফসল।