রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ™^ন্দ্বে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধের শঙ্কা
এম এ আহাদ শাহীন: রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ™^ন্দ্বে, সরকারি বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি প্লাস) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই, বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি মালয় কর্মী নিয়োগকারী সংস্থা ফেলডা গ্লোবাল ভেঞ্চার (এফজিভি) মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি দিয়ে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছে। এর আগে, গত ১ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (কেডিএন) চাহিদাপত্রের প্রেক্ষিতে, পাঁচটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ৫ হাজার ২৪০ জন কর্র্মী নিয়োগের অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সপ্তাহ না ঘুরতেই এফজিভির প্রেসিডেন্ট দাতো জাকারিয়া আশরাফ চিঠিতে জানান, ইতোমধ্যে সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। যে পাঁচ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ, তা এফজিভির স্বীকৃত চাহিদাপত্র নয়। এর ফলে বহুল আলোচিত জিটুটি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জিটুজি প্লাসের মাধ্যমে প্ল্যান্টেশনে (বনায়ন খাতে) ৫ হাজার এবং ফ্যাক্টরির কাজের জন্য পাঁচ এজেন্সির মাধ্যমে ২৪০ জন কর্মীর চাহিদাপত্র পাঠায় কেডিএন। এজেন্সিগুলো হলো,
আমিন ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স নম্বর-৯৮১), ইউনিক ইস্টার্ন লিমিটেড (লাইসেন্স নম্বর-২১), আল ইসলাম ওভারসিস (লাইসেন্স নম্বর-১০৬), প্রান্তিক ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম (লাইসেন্স নম্বর-৩১০) ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালকে (লাইসেন্স নম্বর-৫৪৯) কর্মী পাঠানোর কাজ দেয়। পরবর্তীতে আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পাবে বলে জানা গেছে। বঞ্চিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, এই ১০ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এফজিভির অনুমোদন না নিয়েই অবৈধভাবে কেডিএন ও সিনারফ্ল্যাক্সের মাধ্যমে চাহিদাপত্র এনেছে। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সিনারফ্ল্যাক্স মালয়েশিয়ায় ‘ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’র (এফডব্লিওসিএমএস) ব্যবস্থাপনার কাজ পেয়েছে। এফডব্লিওসিএমএস’র নিয়ন্ত্রিত অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ হবে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এফজিভি সাত এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের জন্য নিযুক্ত করেছে, তারাই কর্মী পাঠাতে পারবে। এজেন্সিগুলো হলো, সরকার রিক্রুটিং এজেন্সি লিমিটেড, এলিগেইন্স ওভারসিস লিমিটেড, আরিজ এন্টারপ্রাইজ, ইমন এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস, কিউপিড ট্রেডস, আল-দোশারি এন্টারপাইজ এবং এমএম কনসালটেন্টস। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকমিশন এফজিভিকে চিঠি দেয়। এতে জানানো হয়, পাঁচ এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। কেডিএন ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র দিয়েছে এজেন্সিগুলোকে।
তিন দিন পর ফিরতি চিঠিতে এফজিভি প্রেসিডেন্ট হাইকমিশনকে জানান, তার কেডিএন’র সঙ্গে কথা বলেছে। একমাত্র এফজিভির প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে এফজিভি, সরাসরি কিংবা অনলাইনের মারফত কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দিতে কেডিএন’কে অনুমোদন দেয়নি। যে পাঁচ এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের কাজ দেওয়া হয়েছে, সে সিদ্ধান্তও অনুমোদন দেবে না বলে জানান জাকারিয়া আশরাফ। চিঠির বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বারবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফোনে, ই-মেইলে বারবার চেষ্টা করেও হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের সাড়া পাওয়া যায়নি। মন্ত্রী, সচিবের কাছে চিঠির অনুলিপি পৌঁছালেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, চিঠির বিষয়ে আমাদের জানা নেই।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা’র মহাসচিব এবং কর্মী প্রেরণের কাজ পাওয়া’ প্রতিষ্ঠান ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তার অভিযোগ, যেসব এজেন্সি কাজ পায়নি এফজিভি’কে ভুল বুঝিয়ে এ চিঠি পাঠিয়েছে। বঞ্চিত এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, যে পাঁচ এজেন্সি কাজ পেয়েছে তারা সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠা করেছে। মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান কর্মী প্রেরণের কাজ পাওয়ায়, প্রতিযোগিতা থাকবে না। এজেন্সিগুলো একচেটিয়া ব্যবসা করে। কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজে যেতে সরকার নির্ধারিত ব্যয়, ৩৭ হাজার টাকার কয়েকগুণ খরচ হবে। পাঁচ এজেন্সি কর্মীদের কাছ থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে রহুল আমিন স্বপন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, এফজিভি যে সাত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চিঠি দিয়েছে তারাই প্রকৃত সিন্ডিকেট। কর্মী পাঠানোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করছে। সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঁচ এজেন্সি- এর জবাবে রহুল আমিন বলেন, ‘কর্মীরা সরাসরি এজেন্সির কাছে আসে না। দুই তিন হাত ঘুরে আসে। এতে কিছুটা ব্যয় বাড়ে। কিন্তু কোনো এজেন্সি কর্মী প্রতি দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
তবে দুই পক্ষই স্বীকার করেন এফজিভির চিঠির কারণে কর্মী প্রেরণ বিলম্বিত হয়েছে। বায়রার সাবেক মহাসচিব আবুল কালাম মনসুর বলেন, এই মুহূর্তে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই। এফজিভি যেখানে বলে দিয়েছে চাহিদাপত্রের বৈধতা নেই, সেহেতু গত মাসে যে সোয়া হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র এসেছে তা আর কার্যকর নয়। তার দাবি, সিন্ডিকেটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে রুহুল আমিন স্বপন দাবি করেন, চাহিদাপত্র বাতিল হবে না। তিনি বলেন, কিছুটা বিলম্ব হবে। যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা কিছু দিনের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে। কত দিনের মধ্যে সমাধান হবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনো সময় জানাতে পারেননি বায়রা মহাসচিব। সম্পাদনা: এনামুল হক